মুসলিম নাগরিক সমাজের দাবীসনদ, কথোপকথনে গৃহীত প্রস্তাব গুলির চূড়ান্ত খসড়া
রাজনৈতিক পরিবেশ ও অধিকার
১। আসন্ন নির্বাচনে, সরকার গঠন করলে, NRC NPR CAA সংক্রান্ত বিষয়ে অবস্থা পরিষ্কার করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে NRC NPR CAA প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ ভাবে বাতিল ঘোষণা করতে হবে।
২। স্থানীয় মুসলিম জনসংখ্যার সমানুপাতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে মুসলিম প্রার্থীকে মনেোনীত করতে হবে। এবং তার মধ্যে মুসলিম নারীদের মনোনয়নকে নিশ্চিত করতে হবে।
৩। সঙ্গী নির্বাচনের অধিকারের স্বাধীনতায় কোন রকম হস্তক্ষেপ করা চলবে না। সামাজিক হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটলে সেক্ষেত্রে প্রশাসনকে যথাযথ উদ্যোগ নিয়ে, সঙ্গী নির্বাচনের অধিকারকে সুনিশ্চিত করতে হবে।
জীবন ও জীবিকার অধিকার
৪। জীবিকার প্রয়োজনে মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষ মূলতঃ শহর ও মফস্বলের অসংগঠিত ক্ষেত্র যেমন, বস্ত্র শিল্প, জরি শিল্প ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত। বিমুদ্রাকরণ, জিএসটি এবং শেষে অতিমারীর কারণে দীর্ঘকালীন উৎপাদন বন্ধ থাকায়, এই অসংগঠিত ক্ষেত্রগুলো যে দীর্ঘমেয়াদী সংকটে ঢুকেছে তার থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারী পরিকল্পনা এবং অর্থসাহায্য প্রয়োজন। অবিলম্বে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
৫। জীবিকার প্রয়োজনে মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষদের একটা বড় অংশ অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে বছরের বেশির ভাগ সময়টাই পরিবারের থেকে দূরে থাকেন। এই অভিবাসী শ্রমিকদের পরিবারবর্গের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
৬। ১০০ দিনের কাজের ক্ষেত্রে আলাদা করে মুসলিম নারীদের জন্য উপযুক্ত কাজের পরিকল্পনা করতে হবে।
৭। সেল্ফ হেল্প গ্রুপ গুলোতে ঋণের বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং সুদের হার কমাতে হবে।
৮। সেল্ফ হেল্প গ্রুপ গুলোর উৎপন্ন পণ্য বাজারজাত করার মতন উপযুক্ত পরিকাঠামো দিতে হবে।
শিক্ষার অধিকার
৯। শহর বা গ্রামে মুসলিম অধ্যূষিত অঞ্চলে, শিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত শিক্ষা পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে।
১০। উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন ধরণের প্রবেশিকা পরীক্ষার পরীক্ষাকেন্দ্রর বিকেন্দ্রীকরণ ঘটাতে হবে।
১১। স্কুলস্তরের শিশুপাঠ্য বইগুলিতে সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর মধ্যে সামাজিক-সাংস্কৃতিক দূরত্ব মেটানোর মত বিষয়বস্তু বাড়াতে হবে।
১২। স্কুলস্তর থেকে যে কোন বড় পরীক্ষায় শুধু ক্রমিক নম্বরের প্রচলন শুরু করতে হবে।
১৩। মুসলিম নারীরা যাতে শিক্ষার সুযোগ পান, সেভাবে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে স্কুল ও কলেজের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এবং প্রতিটি স্কুলে পরিচ্ছন্ন শৌচাগারের নিশ্চয়তা তৈরি করতে হবে। হোস্টেল তৈরি করতে হবে।
স্বাস্থ্যের অধিকার
১৪। শহর ও গ্রামে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে, উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে।
১৫। গ্রামে মুসলিম নারীরা যাতে স্বাস্থ্যের সুযোগ পান সেজন্য নাগালের মধ্যে আশা কর্মীদের পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
গণতান্ত্রিক নাগরিক অধিকার
১৬। শহর ও গ্রামে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে নাগরিক পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের তরফে যে তৎপরতার অভাব লক্ষ্য করা যায় অবিলম্বে তা দূর করতে হবে।
১৭। মুসলিম পরিচয়ের কারণে জমি বা সম্পত্তি বেচা কেনার ক্ষেত্রে বা বাড়ি ভাড়া পেতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে বিভিন্ন রকম সামাজিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এই ধরণের অসুবিধে দূর করার জন্য যথাযথ আইনি বন্দোবস্ত করতে হবে, যাতে সংখ্যালঘু পরিচিতির জন্য এধরণের ক্ষেত্রে কেউ বৈষম্যমূলক ব্যবহার করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।
১৮। সরকারি দফতরে কোন প্রয়োজনে গেলে মুসলিম নাগরিকদের বৈষম্যের শিকার হওয়াটা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এক্ষেত্রে সরকারী কর্মচারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি যেমন প্রয়োজন, তেমনই, সরকারী পরিসরে, সংখ্যগুরুর বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক চিহ্নের ব্যবহার কমানো প্রয়োজন। এসম্পর্কে নবনির্বাচিত সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
সংরক্ষণের অধিকার
১৯। সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী মুসলিম জনসংখ্যার সমানুপাতে সংরক্ষণের সুযোগ দিতে হবে।
২০। মুসলিম সহ, সমস্ত ধর্মের দলিত সম্প্রদায়ের পশ্চাদপদ জাতির শংসাপত্রের পুনর্নবীকরণের মেয়াদ এক বছর থেকে বাড়িয়ে তিন বছর করতে হবে।
২১। ওয়াকফ বোর্ডের সম্পত্তি থেকে যে আয়, তার থেকে মুসলিম সমাজের উন্নতিকল্পে ব্যয় বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
বৈষম্যের প্রতিকার
২২। প্রিভেনশন অফ কমিউনাল অ্যান্ড টার্গেটেড ভায়োলেন্স আইনকে কার্যকরী করতে রাজ্য সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
২৩। মুসলিম শিশুরা ছোট থেকেই একধরণের বৈষম্যের শিকার হয়। তাদের নিজস্ব সামাজিক উৎসব গুলোতে তাদের স্কুল ছুটি থাকে না, কিন্তু সংখ্যগুরু যেকোন উৎসবে তারা একটা লম্বা ছুটি পায়। এই বৈষম্য দূর করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুর উৎসবে ছুটির দিনের সংখ্যায় সামঞ্জস্য আনতে হবে।
২৪। রাজনৈতিক হিংসার ক্ষেত্রেও সংখ্যালঘুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আবার একই দোষে অভিযুক্ত হলেও, মুসলিমরা তুলনায় বেশি দুর্ভোগ সহ্য করছেন। এই অবস্থা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। এর জন্য সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, এবং প্রশাসনিক স্তরে ও সামাজিক ভাবে সচেতনতা গড়ে তুলতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।
মুসলিম নাগরিক সমাজের দাবীসনদটি নিয়ে আপনার যদি কোন মতামত/পরামর্শ থাকে, তাহলে এখানে লিখতে পারেন। https://forms.gle/XqDAAcLZen87qM1g6