"এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না/এই জল্লাদের উল্লাস মঞ্চ আমার দেশ না/এই বিস্তীর্ন শ্মশান আমার দেশ না/এই রক্তস্নাত কসাইখানা আমার দেশ না..."(এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না / নবারুণ ভট্টাচার্য)
প্রিয়াঙ্কা রেড্ডিকে ধর্ষণের পর গায়ে আগুন লাগিয়ে হত্যা করেছিল যারা, তারা গতকাল পুলিশ এনকাউন্টারে মারা গেছে। সেই নিয়ে সকাল থেকে পোস্টের পর পোস্ট। বিচারহীনভাবে এই শাস্তি কাম্য কিনা, তেলেঙ্গানা ডিজিপি প্রকৃত দাবাং কিনা, আরো জঘন্যভাবে ধর্ষকদের মারা উচিত ছিল কিনা, তাদের মাংস জ্যান্ত অবস্থায় ডালকুত্তাকে খাওয়ানো দরকার কিনা, সেসব নিয়ে আলোচনা চলছে এবং চলতেই থাকবে। হোয়াটসঅ্যাপে সেগুলোর আরো ফরোয়ার্ড হতে থাকবে। লোকে 'রজনীকান্ত ফ্যান ক্লাব', 'কালারফুল ইন্ডিয়া', 'মেরা ভারত মহান' 'হক সে সিঙ্গল' পেজ থেকে ছবিওয়ালা পোস্ট স্ট্যাটাসে দিয়ে জানানোর চেষ্টা করবে নারী নিরাপত্তার বিষয়ে তারা কতটা তৎপর। পাড়ার মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানে জমে উঠবে ধর্ষকদের শাস্তির প্রতিবিধান নিয়ে জোরালো আলোচনা। যে যত নৃশংস শাস্তির উপায় বাতলাবে, সে পাবে তত সপ্রশংস দৃষ্টির গৈরিক অভিনন্দন। বেচারা কাশ্মীরীরা তাও করতে পারবে না, ওদের ইন্টারনেট বন্ধ। হোয়াটসঅ্যাপ থেকেও তো একাউন্ট বন্ধ করে দিচ্ছে ১২০ দিন টানা ইন্টারনেট না খোলার জন্য! চায়ের দোকানে বসার মতো অবস্থাও তো নেই রাজ্যে। কী আর করবে? ঘরে বসে ঝালমুড়ি খাবে।
এই তো সেদিন, ২০১২ সালের এরকম ডিসেম্বর মাসেই তো দিল্লীতে 'নির্ভয়া' নামে পরিচিত তরুণীর সাথে যা ঘটেছিল, তাতে গোটা দেশ কেঁপে উঠেছিল। প্রতিবাদ হয়েছিল। লেখালেখি হয়েছিল। কী হয়েছিল তাতে? ধর্ষণের ঘটনা কমেছিল? কই না তো! দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে অপরাধ প্রবণতা কমে? কই না তো! পরিসংখ্যান তো অন্য কথা বলছে। ২০১৩ সালে প্রকাশিত ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর এর তথ্য অনুসারে ২০১২ এ হওয়া মোট ধর্ষণের ঘটনা ২৪৯২৩ টা। সেখানে পাঁচ বছর পর ২০১৭ সালে হওয়া ধর্ষণের সংখ্যা ৩২৫৫৯। কই, সংখ্যাটা কমেনি তো? দেশজুড়ে প্রতিবাদ হওয়া সত্ত্বেও, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া সত্ত্বেও উল্টে সংখ্যাটা বেড়েছে। ওদিকে ইতিমধ্যে উনাতে যে নাবালিকার ধর্ষণের জন্য কোর্টে শুনানি চলছিল, তাকে এই বৃহস্পতিবারেই কোর্টে যাওয়ার পথে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়েছে। ৯০% দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। আজ রাতে সে মারা গেছে। যে বৃহস্পতিবার প্রিয়াঙ্কা রেড্ডির গায়ে আগুন লাগানো হয়, এটা ঠিক তার পরের বৃহস্পতিবারেরই ঘটনা। ওদিকে স্বামী নিত্যানন্দ নামের এক বাবাজী, একাধিক ধর্ষণকাণ্ডে জড়িয়েছে যাঁর নাম, তিনি দেশ থেকে পলাতক। ইকুয়েডরে একটা দ্বীপ কিনে নিয়ে সেটার নাম দিয়েছেন 'কৈলাস'। ওয়েবসাইট চেক করে দেখুন, তিনি সবচেয়ে 'মহান' এবং 'পবিত্র' হিন্দুধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার কাজে ব্রতী।
কাশ্মীরে বসে ঝালমুড়ি খাওয়ার কথা যাদের গায়ে লেগেছে তাদের মনে করিয়ে দিই, কাশ্মীরের ৩৭০ তম অনুচ্ছেদ বিলুপ্তির পর হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার বলেছিলেন যে আগে বলা হত বিহার থেকে 'বউ' আনা হবে, এখন লোকে বলছে কাশ্মীরের রাস্তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। কাশ্মীর থেকে মেয়ে আনা যাবে। মেয়েদের চিরকাল পণ্য হিসেবে দেখে আসা মন্ত্রীমশাইয়ের আর দোষ কী! উনি তো এই সমাজব্যবস্থারই প্রোডাক্ট, বলুন! ৩৭০ ধারা বিলোপের পর সেই তো কবেই ভাইরাল হয়ে গেছে ভোজপুরী আর হরিয়ানভি ভাষার স্থানীয় গান "লাইবো কাশ্মীর সে দুলহানিয়া"। হাজার হাজার লোক শুনেছে সে গান। হাততালি দিয়েছে, টিটকিরি ছুঁড়েছে। ভাবখানা এমন যে, এই বীরপুঙ্গবদের কাশ্মীরি মেয়ে বিয়ে করবার জন্য এতদিন যেন নোলা লকলক করছিল। সুযোগ পায়নি, হঠাৎই ওই ধারা বিলোপের পর বামন হাতে চাঁদ পেয়েছে। এদিকে মেয়েদের অবজেক্টিফাই করা এইসব গান যখন বাজার মাত করছে, তখন ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো এর তথ্য অনুসারে, ভারতে কোনো না কোনো স্থানে গড়ে ১০৬ জন মহিলা ধর্ষিতা হচ্ছেন প্রতিদিন। অর্থাৎ প্রতি ১৫ মিনিটে গড়ে একজন করে। এইসব ভিক্টিমদের মধ্যে আবার প্রতি ১০ জনে ৪ জনের বয়স প্রাপ্ত বয়স্কর চৌকাঠও পেরোয়নি। কিন্তু ওই, কী আর করা যাবে, ছত্রিশগড় এর গৃহমন্ত্রী এবং বিজেপির নেতা রামসেবক পাইকরা তো সেই কবে ২০১৪ সালেই বলে দিয়েছেন যে ধর্ষণ তো কেউ আর ইচ্ছা করে করে না, ভুল করে হয়ে যায়। আপনারাই বলুন, মন্ত্রীমশাই ভুল কিছু বলেছেন? মুলায়ম সিং যাদব ও তো একই কথা বলে কয়েকবছর আগে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন, তাঁর বক্তব্য অনুসারে ছেলেরা তো ছেলেদের মতো আচরণ করবেই...তাই বলে তাদের ফাঁসি দিতে হবে! বুঝুন কান্ড! রেওয়াজি ঢ্যামনা আর কাদের বলে!
আরেকজন এরকম লোক মধ্যপ্রদেশের গৃহমন্ত্রী বাবুলাল গড়। ২০১৪ সালের জুন মাসে তাঁর বক্তব্য ছিল যে ধর্ষণ ক্ষেত্রবিশেষে 'ঠিক' এবং ক্ষেত্রবিশেষে 'ভুল', সরকার মেয়েদের নিরাপত্তার ঠিকে নেয়নি। মজার ব্যাপার, কোন কোন ক্ষেত্রবিশেষে যে 'ধর্ষণ' করাকে ঠিক মনে করেন বিজেপির এই মন্ত্রী, সেটি অবশ্য তিনি আর খোলসা করে বলেননি। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে জার্নালিস্ট প্রিয়াঙ্কা দুবের লেখা 'নো নেশন ফর উইমেন'' বইটার কথা।
বইটার জন্ম হয় ২০১২ এর দিল্লির রেপ কেস নিয়ে রিপোর্ট লিখতে গিয়ে। তখনও প্রিয়াঙ্কা জার্নালিজম এর ছাত্রী। রেপ নিয়ে লিখতে গিয়ে তিনি বিষয়টা নিয়ে পড়াশুনো করতে শুরু করেন। বুঝতে পারেন কতসংখ্যক আনডকুমেন্টেড রেপ কেস ঘটে থাকে ভারতবর্ষে। সরকারি খতিয়ানে সেসব ঘটনা স্থান পর্যন্ত পায় না। মেয়েরা থানায় রিপোর্ট করতে পর্যন্ত ভয় পায়। অথচ এ নিয়ে প্রামাণ্য কোনো কাজও হয়নি। অবস্থার শোচনীয়তা উপলব্ধি করে প্রিয়াঙ্কা নিজে ফিল্ডে গিয়ে গবেষণা করে লিখতে শুরু করেন বইটি। 'নো নেশন ফর উইমেন' এ গোটা ভারত ঘুরে ৬ বছরের পরিশ্রমে তিনি ১৩ টি ঘটনার কথা লেখেন। সেখানে প্রথম চ্যাপ্টারেই উঠে এসেছে বুন্দেলখন্দের 'কারেক্টিভ রেপ' এর কথা। ওখানে যেসব মেয়েরা পুরুষের লালসাকে মুখের উপর 'না' বলার স্পর্ধা দেখিয়েছে, তাদের অনেককেই ধর্ষিত এবং খুন হতে হয়েছে। পরকীয়া সম্পর্কের সন্দেহে হোক, চরিত্রহীনতার ছুতো দেখিয়ে হোক, তাদেরকে নির্বিচারে ধর্ষণ করা হয়েছে। অনেককে ধর্ষণের পর পুড়িয়ে গাছে টাঙিয়ে দেওয়া পর্যন্ত হয়েছে। যাঁরা মার্গারেট অ্যাটউডের লেখা 'দ্য হ্যান্ডমেইডস টেইল' উপন্যাসটা পড়েছেন, তাঁদের গিলিয়াডের 'দ্য ওয়াল' এ শাস্তিমূলকভাবে অভিযুক্ত হ্যান্ডমেইডদের মৃতদেহ ঝুলিয়ে রাখার প্রথার কথা মনে আছে আশা করি। তা পরিচিত ছিল 'স্যালভেজিং' নামে। বর্তমান ভারতেও এ ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। তবে একটু অন্য ঢং এ। এখানে কোনো মেয়েকে ধর্ষণের পর পুড়িয়ে বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে আমগাছ বা কাঁঠাল গাছে। প্রিয়াঙ্কার বইতেই আছে একটা চ্যাপ্টার, শিরোনাম- 'হ্যাংগিং ফ্রম এ ম্যাঙ্গো ট্রি: দ্য রেপ এন্ড মার্ডার অফ দ্য বাদাউন সিস্টার্স'। ওই অধ্যায়ে ২০১৪ সালের মে মাসে উত্তরপ্রদেশের বাদাউন জেলায় হওয়া দুই বোনের জোড়া ধর্ষণ ও পুড়িয়ে খুনের কথা আছে। পোড়া মৃতদেহ দুটো হাওয়ায় দুলছিল।
এসব 'শাস্তিমূলক' ব্যবস্থা নেওয়ার পিছনে উদ্দেশ্য নিছকই অন্যদের মনে ভয়ের সঞ্চার করা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বারবার মেয়েদের মনে করানো হয়, অবাধ্য হলে তাদের কত ভারী মূল্য দিতে হবে। প্রিয়াঙ্কার দাবি, কেবলমাত্র ২০০৯ এবং ২০১০ সালের মধ্যেই বুন্দেলখন্দে অন্তত ১৫ টা এমন ঘটনার ডকুমেন্টেশন তাঁর কাছে আছে, যেখানে আক্রান্ত থানায় গিয়ে রিপোর্ট করার সুযোগ পর্যন্ত পায়নি। এদের নাম হারিয়ে গেছে চিরতরে। থানায় কোনো ডায়রি পর্যন্ত হয়নি। এবার থামুন। দম নিন। ভাবুন 'কারেক্টিভ রেপ' শব্দটার বাংলা তর্জমা কী হতে পারে? 'সংশোধনী ধর্ষণ'?! কার সংশোধন? কে করে? যে সমাজে 'ধর্ষণ' শব্দটার সামনে অনায়াসে 'সংশোধনী' এর মতো বিশেষণের প্রয়োগ করা চলে, সেখানে আদালত একজন দুজনকে শাস্তি দিয়ে আর কী করবে বলুন তো? আসল ঘুণপোকা তো মানুষের মনে। ধর্ষণ যখন সামাজিক মান্যতা পেয়ে যায়, তখন 'হ্যামলেট' এর সেই অমোঘ লাইন মনে আসে - "something is rotten in the state of Denmark" শাস্তি কারা পাবে,কী ভাবে পাবে, সেটাও সংখ্যাগরিষ্ঠের সমাজই ঠিক করে দিচ্ছে। দেশের বিচারব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যখন খাপ পঞ্চায়েত ঠিক করে দিচ্ছে শাস্তির মাত্রা এবং চরিত্র, সেখানে তো এমনিই প্রহসনে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি।
সরকারি বয়ান অনুযায়ী, তেলেঙ্গানা ডিজিপি ডঃ প্রিয়াঙ্কা রেড্ডির পলাতক ঘাতকদের গুলি করে হত্যা করেছেন। সে ঘটনা এখন দেশজুড়ে আহ্লাদের বিষয়। উৎসব করছে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। তারা রীতিমতো ফুলচন্দন দিয়ে বরণ করছে আদালতহীন এই বিচারকে। কিন্তু নৃশংসভাবে হত্যা করলেই কী ধর্ষণ কমে যাবে? শুধরে যাবে এই নরাধমরা? আর ধর্ষণ হবে না? প্রশ্ন তুলেছিছেন অপর্ণা সেন। সেজন্য তাঁকেও নিন্দামন্দ শুনতে হয়েছে অনেক স্বঘোষিত 'দেশভক্ত' জনগণের কাছ থেকে। তসলিমা নাসরিন টুইট করেছেন, "অপরাধীদের মেরে ফেলা সহজ, কিন্তু মানুষকে এমনভাবে শিক্ষিত করা কঠিন, যাতে সে আবার অপরাধী না হয়। আমরা সহজ রাস্তা ভালোবাসি।"
প্রিয়াঙ্কা রেড্ডি এবং উনার নাবালিকার ক্ষেত্রে হয়তো 'অনার কিলিং' হয়নি। প্রমাণ লোপাটই হয়তো প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল গায়ে আগুন দেওয়ার। কিন্তু আসল রোগটা তো লুকিয়ে আছে ধর্ষকদের অসুস্থ মানসিকতায়। তারা যে এই সমাজেরই উৎপাদন। সমাজ যদি সর্বোপরি অসুস্থ হয়, তবে সে অসুস্থ মানসিকতার মানুষই উৎপন্ন করবে। যে দেশে জনপ্রতিনিধিরা মহিলাদের নিয়ে নিয়মিত এমন ন্যাক্কারজনক কথা বলে, সে দেশের সাধারণ মানুষ যে তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করবে তাতে আর আশ্চর্যের কী?
ধর্ষকদের বিনাবিচারে গুলি করে মারা নিয়ে যে ঢক্কনিনাদ, তার আওয়াজের নীচে আজ ভোররাতে কোথায় নীরবে মারা গেল উনার ধর্ষিতা নাবালিকা। তাকে নিয়ে কোনো লেখা চোখে পড়ছে না, খবরের কাগজের এককোণে একচিলতে সেই জ্ঞাপন। ধর্ষক তো নরাধম সেটা সবাই জানে। সে নিয়ম মানবে না সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু চিন্তার বিষয়, সেই ধর্ষকের জন্য জনসাধারণ আজ যে শোনিততৃষ্ণা অনুভব করছে, তা যেন আদিমতম প্রবণতারই লাগামবিহীন উদযাপন। প্রাচীন রোমেও গ্লাডিয়েটর প্রথা প্রচলিত ছিল। পশুদের সাথে মানুষের লড়াই। মানুষ হেরে গেলে পশুর মুখের খাদ্য হত। অন্যরা তারিয়ে তারিয়ে আমোদ করে সেই নৃশংসতা উপভোগ করত। ২০১৫ সালের এন সি আর বি এর রিপোর্ট অনুযায়ী ৯৫ শতাংশ ধর্ষক ভিক্টিমের এর পূর্বপরিচিত। অচেনা লোকের থেকে আক্রান্ত হয় মাত্র ৫ শতাংশ মহিলা। এই পরিসংখ্যানের তীব্রতা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। ভাবুন, আমাদের পরিচিত বৃত্তের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সেই নরপশু। আজ কলোসিয়ামের গ্যালারিতে বসে আমজনতার ভিড়ে যে দর্শক হাততালি দিচ্ছে, উপভোগ করছে ধর্ষকদের মৃত্যু, তাদের মধ্যেই কতজন মনে মনে লালন করে 'টক্সিক ম্যাসকিউলিনিটি' এর বীজ। বাড়িতে ফিরে স্ত্রীয়ের গায়ে হাত তোলে, দিনের পর দিন 'ম্যারিটাল রেপ' এর শিকার হয় তার স্ত্রী। স্ত্রীও মেনে নিয়েছে। তাকে বলা হয়েছে, ওটাই প্রকৃতির বিধান। পুরুষমানুষ তো অমন একটু করবেই। সংসারের রিং এ একজন শিকার আর আরেকজন শিকারী। কখন যে কে কোনটা হবে সেটা এই অন্ধকার সময়ে বলা সম্ভব নয় আর। আজ যারা দেশের বিবেক হয়ে ধর্ষকদের গুলি করে মেরে ফেলাকে সমর্থন করছে, কালই হয়তো দেখা যাবে তাদের মধ্যে কেউ পরিবারের সম্মানার্থে বা ধর্মের নামে 'অনার কিলিং' বা 'কারেক্টিভ রেপ' এর আশ্রয় নিচ্ছে।
অতঃকিম? কী কর্তব্য? আপাতত সমাজের দরকার 'শিক্ষা'। পুঁথিগত ডিগ্রিধারী 'শিক্ষা' নয়, মানুষ হওয়ার জন্য ন্যূনতম যে শিক্ষাটা লাগে, সেটার। গোটা সমাজের শিক্ষা। এ কাজ কী সরকার করবে? আজ্ঞে না, একদমই না। মানুষ যত অশিক্ষিত থাকবে, ওদের তত সুবিধা। তার উপর এখানে তো কোনো গিমিক নেই, নেই টুপি থেকে খরগোশ বের করার প্রতিশ্রুতি। শিক্ষা ছড়ালে ভোট আসে না। উল্টে খবরের টি আর পি কমে যায়। শিক্ষিত মানুষ ভদ্র ও মার্জিত হয়ে যায়। রাতের প্রাইমটাইম স্লটে মুখরোচক চিৎকারে ঘাটতি ঘটে। সমস্যার দাওয়াই সবাই জানে। কিন্তু প্রশ্ন হল, সরকার এবং জনগণ সেরকম কার্যকরী প্রতিষেধক নিতে আজও তৈরি তো?