কলকাতা কমন্স

Jesob-Meyeder-Naam-2
এমন এক পোড়া সমাজে জন্মেছি যেখানে তোমার জন্মানোর পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে যায় তোমার দুই পায়ের মাঝে কি আছে সেইটি। আর তার ওপর যদি ছায়া পড়ে অভাব, অনটন, অশিক্ষা, জাতপাত, চাওয়া পাওয়ার তাহলে তো কথাই নেই। এক একটা অদ্ভুত মাকড়সার জালের মতো পরস্পরের সাথে জড়িয়ে জড়িয়ে বাড়তে থাকে। একটাকে ছাড়িয়ে যেতে চাইবে আরেকটা পা টেনে ধরবে। আর এভাবেই হাজারে হাজারে মানুষে বাজারে হারিয়ে যায়, আমাদের আর তাদের নামগুলো আলাদা করে মনে পড়ে না।
গত ২৯ বছর ধরে আয়নায় নিজেকে দেখেছি প্রতিদিন। আর আশে পাশে দেখেছি আরো কতগুলো মুখ, কতগুলো হারিয়ে যাওয়া নাম। সেইসব মেয়েদের কথা বলবো একটা একটা করে যাদের নাম আমাদের মনে পড়ে না।
 
ওর বাবা বলেছিল শহরে কাজের ব্যবস্থা করে দেবে একজন। পরে জেনেছিল সেই একজনের কাছে ৩০ হাজার টাকা পেয়েছিল ওর বাবা। তখন মনে হয়েছিল টাকাটা অনেক, অনেকটা পরে নিজে এই টাকা রোজগার করতে শুরু করলো। যদিও সে টাকার কিয়দংশই নিজের হাতে পেতো। পুরুলিয়ার একটা ছোট্ট গ্রাম থেকে কয়েক হাত ঘুড়ে একটা এক চিলতের খুপড়ি মতো স্যাঁতস্যাঁতে ঘর, কালীঘাটের কাছে। এখন খালি আবছা মনে পড়ে। ক্লাস সেভেনের ফেলে আসা আধ পেটা লিকলিকে শরীরটা ইনজেকশনে ইনজেকশনে ঘোরের মধ্যে দিয়ে আকারে একটু একটু করে বড় হচ্ছিল। প্রথম প্রথম ঘরেই খাওয়ার আসতো। ঘোরের মধ্যে কী খাচ্ছে কী হচ্ছে প্রায় কোনো সাড় থাকতো না। ঘরে লোক ঢুকতো, বেড়োতে। একবার মনে পড়ে একসাথে তিনজন ঢুকেছিল, তারপর শেষের দিকে মারামারি, মদের বোতল ভাঙাভাঙি, কাঁচের টুকরে রক্তারক্তি। এগুলো তাও কিছু কিছু মনে পড়ে। কখনো কখনো ঘোরের মধ্যে দুবার চোখ খুলে দুটো আলাদা লোককে দেখতে পেতো। আস্তে আস্তে সবটা অভ্যেস হয়ে গেছিল। তারপর ওখান থেকে অন্য জায়গা। সেখানের ঘরটা আরো খানিকটা ছোটো। ততদিনে দরাদরি, গালিগালাজ সব শিখে ফেলেছে। তারপর একদিন এক রেসকিউ অপারেশনের হাত ঘুড়ে কোর্ট।
ওর বাড়ির লোককে খুঁজে পাওয়া গেছিল। ওর বাবা বলেছিল কোনো টাকা দেওয়া নেওয়া হয়নি, মেয়ে কাজ পাবে ভেবে শহরে পাঠিয়েছিল। আর এখন ঘরে তোলা যাবে না, পাড়া গাঁয়ে মান থাকবে না। মেয়েটা যতটা ওড়না টেনে বয়ান দিতে এসেছিল, তার চেয়েও খানিক আরো ঢেকেঢুকে বেড়িয়ে গেছিল হোমের দিকে।
হোমের ঘরটা অনেকটা বড়, এক ঘরে একসাথে ১৫ জন থাকে। জামার লেসের কাজ করে। কিন্তু ঠিকঠিক মিটারের না জমা করতে পারলে রাতের খাওয়ার নিয়ে এখানেও বড় কড়াকড়ি করে!

এই মেয়েটির আসল নাম আমার আর কি মনে পড়বে, ওর নিজেরই মনে পড়ে না!
 
 

এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত যে কোন লেখালেখি, সেটা কলকাতা কমন্স-এর বক্তব্য হোক বা কোন ব্যক্তি-র, সেটা, সেই বিষয়ে, একটা ধারণা তৈরি করার প্রক্রিয়ার অংশ।চূড়ান্ত কোন অবস্থান নয়, একটা অবস্থানে পৌঁছনোর চেষ্টা।

তাই, এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত 'কলকাতা কমন্স’-এর যে কোন লেখা যে কেউ, প্রয়োজন বুঝলে, অন্য যে কোন জায়গায় ব্যবহার করতে পারেন। আমরা সেই ব্যবহারটা জানতে আগ্রহী।তাহলে এই চর্চা তৈরির চেষ্টাটা আরও ফলপ্রসূ হয়।

যে লেখাগুলো কলকাতা কমন্স-এর নয়, কোন ব্যক্তির নামে প্রকাশিত, সেখানে, বক্তব্যটা একান্তই লেখকের নিজস্ব। আমরা সেই বক্তব্যটা চর্চার প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি। এই লেখাগুলো আমরা লেখকের অনুমতিক্রমে প্রকাশ করি। সেগুলো অন্য কোথাও ব্যবহারের দায়িত্ব আমাদের পক্ষে নেওয়া সমীচীন নয়।

আর এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত যে কোন লেখা সম্পর্কে যে কোন প্রতিক্রিয়া কে আমরা স্বাগত জানাই।

আমাদের ইমেল করতে পারেন, commons@kolkatacommons.org তে।