দলিত সমাজের দাবীসনদ, কথোপকথন-এ গৃহীত প্রস্তাবগুলির চূড়ান্ত খসড়া
নাগরিক অধিকার
১। দলিত সমাজের স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গে অবিলম্বে NRC-CAA-NPR প্রক্রিয়া রদ করতে হবে।
সংরক্ষণের অধিকারের দাবী
২। দলিত সমাজের জন্য সংরক্ষিত আসনে উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়ার দায় দলিত সমাজের নয়, সরকারের। সরকারি পদে, নট ফাউন্ড স্যুটেবল-এর অজুহাতে, সংরক্ষিত আসন সাধারণ ক্যাটাগরিতে চালান করা চলবে না। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রার্থীদের নির্দ্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তার জন্য যোগ্য করে তোলার জন্য রাজ্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
৩। দলিত সমাজের সদস্যদের সুযোগ নিশ্চিত করতে দলিত সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে মনিটরিং কমিটি তৈরি করতে হবে।
৪। দলিত সমাজের প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণের বিষয়টিতে দলিত সমাজের আধিকারিকদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৫। সংরক্ষণ যে উচ্চবর্ণ হিন্দুদের অনুগ্রহ নয় বরং দলিত সমাজের অধিকার এই বিষয়টা বোঝার মতন করে প্রাথমিক স্তরের পাঠক্রম থেকে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
৬। দলিত সমাজের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে হবে।
৭। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকেও সংরক্ষণের আওতায় আনতে হবে।
৮। বেসরকারী শিক্ষাক্ষেত্রে দলিত সমাজের জন্য সংরক্ষণের সুযোগ দিতে হবে।
৯। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দলিত সমাজের জন্য সংরক্ষিত কর্মসংস্থানের জন্য সুযোগ তৈরি করতে হবে।
প্রশাসনিক প্রতিনিধিত্বের দাবী
১০। স্বল্প শিক্ষিত দলিত মানুষদের স্বনির্ভর করার জন্য তফসিলি জাতি ও আদিবাসী উন্নয়ন বিত্ত নিগম আছে । প্রতি জেলায় তাদের শাখা ও আছে। ভর্তুকি সহ ঋণ দেবার ব্যবস্থা করে। কিন্তু যথেষ্ট বাজেট নেই । আদৌ কোন প্রচার নেই । এই বিত্ত নিগমকে শক্তিশালী ও সক্রিয় করতে হবে। বিত্ত নিগম সহ দলিত ও জনজাতির উন্নয়ন সংক্রন্ত যে কোন প্রশাসনিক কাঠামোয় সেখানে দলিত ও আদিবাসী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
খাদ্য সুরক্ষার দাবী
১১। দলিত মানুষের খাদ্য পরিষেবার প্রধান উৎস রেশনিং ব্যবসার বিভিন্ন ভাগ করার প্রকৃত কারন ধীরে ধীরে ব্যবস্থাটা ই তুলে দেবার প্রাথমিক ধাপ । রেশন কার্ডের শ্রেণী বিভাগ তুলে দিতে হবে এবং রেশনিং ব্যবস্থাকে আরো জনমুখী করতে হবে।
জীবন ও জীবিকা সংক্রান্ত দাবী
১২। সেচের বন্দোবস্ত নিশ্চিত করে একফসলী জমিকে তিন ফসলী করতে হবে। সার এবং কীটনাশক এবং সেচব্যবস্থায় ভর্তুকি বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
১৩। সমস্ত ফসলের ন্যূনতম মূল্য নিশ্চিত করতে হবে।
১৪। ফসল সংরক্ষণের জন্য হিমঘরের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
১৫। কৃষিতে ন্যূনতম মজুরি সুনিশ্চিত করতে হবে
১৬। গ্রামীণ কারিগর ও কুটীর শিল্পকে সহায়তা করার মতন সরকারি পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে।
১৭। গ্রামীন স্বনির্ভর কারিগরদের জন্য সরকারি ঋণ ও বিপণনের ব্যবস্থা করতে হবে
১৮। ১০০ দিনের কাজকে ন্যূনতম ১৫০ দিনের করতে হবে।
১৯। মৎস চাষ পশুপালন পর্যটন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত উদ্যোগীদের সাহায্য করার জন্য সরকারি ঋণ ও বিপনণ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।
২০। শহরের সঙ্গে গ্রামের যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য গ্রামীণ পরিবহণ পরিকাঠামোকে উন্নত করতে হবে।
২১। দলিত সমাজের একটা বড় অংশ অভিবাসী শ্রমিক। অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য আলাদা করে একটা দফতর তৈরি করতে হবে।
২২। দলিত সমাজ সহ সমস্ত স্বাধীন পেশাজীবিদের জন্য জীবন স্বাস্থ্য ও দুর্ঘটনা জনিত বীমার বন্দোবস্ত করতে হবে।
২৩। মৃতদেহ সৎকার ও নর্মদা ইত্যাদি ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য বেতন বা মজুরি যথেষ্ট নয় । দক্ষ শ্রমিক বা দুর্গম অঞ্চলে কাজ করলে যেমন বেশি বেতন বা ভাতা দেওয়া হয় সেইরকম বেশি বেতন বা ভাতা দিতে হবে।
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত দাবী
২৪। সময় বেঁধে দলিত সমাজের সকল সদস্যকে সাক্ষর করার জন্য বিশেষ সাক্ষরতা অভিযান সংঘটিত করতে হবে।
২৫। বিনামূল্যে মাতৃভাষায় আবাসিক প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
২৬। দলিত সমাজের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সরকারি উদ্যোগে ইংরিজি শিক্ষার সুযোগ তৈরি করতে হবে।
২৭। দলিত সমাজের ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের জন্য রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে পলিটেকনিক কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
২৮। দলিত সমাজের ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার পরে গবেষণার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
২৯। দলিত ছাত্রছাত্রীদের জন্য ব্লকভিত্তিক কাউন্সেলিং সেন্টার এবং কোচিং সেন্টার স্থাপন করতে হবে। স্বাস্থ্যের অধিকার
৩০। প্রতি ব্লকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিশ্চিত করতে হবে।
৩১। প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত চিকিৎসার বন্দোবস্ত নিশ্চিত করতে হবে।
৩২। দলিত সমাজ থেকে তরুণ তরুণীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করতে হবে। দলিত নারীদের অধিকার
৩৩। পৃথকভাবে দলিত নারীর সংরক্ষণ চালু করতে হবে।
৩৪। এক বছরের মধ্যে সমস্ত দলিত মহিলাদের সাক্ষর করে তুলতে হবে।
৩৫। কর্মক্ষেত্রে দলিত মহিলাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রশাসনিক সংস্কার সংক্রান্ত দাবী
৩৬। শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ বন্ধ করতে হবে
৩৭। রাজ্যসরকারের অধীন সংস্থাগুলোকে বেসরকারি করা চলবে না
৩৮। প্ল্যানিং কমিশন উঠে যাওয়ার পরে SC ST সাব প্ল্যান উঠে যাওয়ার ফলে বাজেট বরাদ্দ কমে গেছে। অবিলম্বে দলিত ও জনজাতির জন্য সাবপ্ল্যান তৈরি করে ব্যয় বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
৩৯। বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে দলিত সমাজের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে
৪০। দলিত সমাজের সদস্যদের ওপরে বৈষম্যের ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক ও তৎপর আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে
৪১। দলিত সমাজের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বৃহত্তর সমাজের পরিচয় ঘটানোর জন্য প্রাথমিক স্তর থেকে পাঠক্রমে এই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। দলিত সমাজের মনীষীদের জীবন পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৪২। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যস্তর থেকে পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত দলিত সমাজের জন্য সিডিউল কাস্ট কমিশন গঠন করতে হবে। দলিতদের ওপর সামাজিক নির্যাতনের ঘটনার ক্ষেত্রে কমিশনকে তাৎক্ষণিক ও তৎপর ভাবে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দ্দেশ দিতে হবে।
৪৩। জাত ব্যবস্থা দূর করার অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে অসবর্ণ বিবাহকে আম্বেদকর গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিয়েছেন । এই ধরিনের বিবাহের জন্য উৎসাহ ভাতা আকর্ষনীয় ভাবে বৃদ্ধি করতে হবে।
৪৪। শিল্পায়ন, উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় উচ্ছেদ হওয়া মানুষের একটা বড় অংশই দলিত সমাজের সদস্য। দলিত সমাজের মানুষ সহ সমস্ত উন্নয়ন উদ্বাস্তুদের যথাযথ পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।
দলিত সমাজের দাবীসনদটি নিয়ে আপনার যদি কোন মতামত/পরামর্শ থাকে, তাহলে এখানে লিখতে পারেন। https://forms.gle/XqDAAcLZen87qM1g6