কলকাতা কমন্স

আর্ট কালেক্‌টিভ

আর্ট কালেক্টিভ একটা আইডিয়া। নির্দ্দিষ্ট কিছু মানুষ নয়। নির্দ্দিষ্ট কোন ঠিকানা নয়। বরং একটা বহমান প্রক্রিয়া।
কলকাতা কমন্স-এর কাজের প্রয়োজনে যে খোঁজগুলো দরকারি বলে মনে হচ্ছিল, বোঝাপড়াগুলো যেভাবে বলা দরকারি হয়ে উঠছিল, সেই সমস্ত প্রয়োজনের তাগিদেই আর্ট কালেক্টিভ-এর ভাবনাটা তৈরি হয়। শিল্পচর্চার বিভিন্ন মাধ্যম-ই সেখানে প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাচিক, গান, ছবি আঁকা, ফটোগ্রাফি, গান, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, নাটক সমস্ত কিছুই আমাদের খোঁজগুলোর জন্য এবং বোঝাপড়াগুলো প্রকাশ করার জন্য নেহাতই জরুরি মনে হচ্ছিল।
এসব থেকেই আর্ট কালেক্টিভ-এর আইডিয়াটা গজিয়ে ওঠে। কোন নির্দ্দিষ্ট দল বা ব্যক্তিকে ধরে নয়, একটা ভাবনা-কে ধরে, পরিচিত অপরিচিত ব্যক্তি ও সংগঠনরা একসঙ্গে এসে বা আলাদা করে একটা চর্চা ও আদান প্রদানের জায়গা তৈরি করতে পারবেন এরকম একটা যৌথতা।হতে পারে, তাঁরা ইতিমধ্যেই একটা দল হিসেবে কাজ করেন, অথবা, কথোপকথন-এর পরিচয়েই একটা দল পাকিয়ে তুলতে পারেন।একটি নির্দ্দিষ্ট প্রকাশভঙ্গীর প্রয়োজনে এতদিন অপরিচিত মানুষেরা একসঙ্গে একটা কোন ঘটনা ঘটিয়ে তুললেন, এরকম যে কোন কিছুই সম্ভব। যাঁরা ইতিমধ্যেই দলীয় পরিচিতিতে কাজ করেন, তাঁরা তাঁদের পরিচয় নিয়েই এখানে কাজ করবেন, এখান থেকে কোন দলীয় পরিচিতি তৈরি করতে পারেন, ব্যক্তি হিসেবে কোন কাজ করতে চাইলেও কোন সমস্যা নেই বরং স্বাগত – কারণ এই প্রতিটি ছোট, আলাদা, ব্যক্তি বা সাংগঠনিক উদ্যোগগুলো মিলেই, একটা সামাজিক উদ্যোগ তৈরি হয়ে উঠতে পারে, যেগুলো এই উদ্যোগের অংশীদার প্রত্যেকে, নিজের সঙ্গে, নিজের কাজের বা বসবাসের ঠিকানায়, বয়ে নিয়ে চলতে পারেন।
এই উদ্যোগটার নাম দেওয়া হয়েছিল আর্ট কালেক্টিভ।
আর্ট কালেক্টিভ-এর এই ভাবনাটা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলার অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, গোটাটা শোনার পরে, কেউ কেউ এটাকে একটা ইভেন্ট-এর ভেন্যু হিসেবে দেখেছেন।
আবার কেউ কেউ এটাকে দেখেছেন, এতদিন তাঁদের নিজেদের খোঁজ-এর একটা সমাধান-এর চেষ্টা হিসেবে। আমদের নিজেদের অনভিজ্ঞতার কারণে, প্রথম ধরণের মানুষদের, বোঝা-টা বুঝতে আমাদের প্রাথমিকভাবে অসুবিধে হয়েছে। কিন্তু ঠেকে শেখাও একটা শেখার ধরণ। বিশেষতঃ, যেখানে দেখে শেখার মতন সমগোত্রীয় উদাহরণ কম।
আমরা ভাগ্যবান, এই দ্বিতীয় অংশের মানুষজনের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার কারণে। আর্ট কালেক্টিভ-এর ধারণাটা যতটা অনুশীলন-এ নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে, সেটা এই সমস্ত মানুষদের জন্যই।
অতিমারী-র প্রকোপ, এবং সামগ্রিক সামাজিক ও প্রশাসনিক পরিকল্পতাহীণতার কারণে, সাতমাস চেষ্টা করার পরেও, ২০২০-র অক্টোবরে কলকাতা কমন্স-এর সল্টলেক-এর ঠিকানাটা ছাড়তে আমরা বাধ্য হয়েছি। এটা ঠিক যে, একটা নির্দ্দিষ্ট ঠিকানা বিভিন্ন কিছুকে ঘটিয়ে তোলার জন্য সাহায্য করেছে। কিন্তু, আর্ট কালেক্টিভ-এর ধারণাটা যেহেতু কখনই নির্দ্দিষ্ট ঠিকানা নির্ভর ছিল না, তাই এই উদ্যোগটাকে আমরা কলকাতা কমন্স-এর পক্ষ থেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী।

২ এপ্রিল, ২০১৯। কথোপকথন থেকে সমূহ-র পথ চলা শুরু।
২ এপ্রিল, ২০১৯। কথোপকথন থেকে সমূহ-র পথ চলা শুরু। ছবি সূত্র - DW Studios

নাটকের দল, 'সমূহ'-র গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় প্রথম থেকেই সাক্ষী থেকেছে কলকাতা কমন্স। আর্ট কালেক্টিভ-এর আইডিয়াটা কতটা সম্ভব সেটা বুঝতে আরও বেশি করে সাহায্য করেছে সমূহ-র অভিজ্ঞতা।

নাট্যকার যখন একের পর এক স্তর অতিক্রম করে চলেন তখন সে এক মজার বিষয় হতে থাকে। আজকে ‘আমি, অনুকূল ও ওরা’ দেখতে বসে তিনজনের কথা আমার ভীষণ মনে হচ্ছিল। ইবসেন, জীবনানন্দ এবং বেকেট। বেকেট তার মধ্যে নাটকেই উল্লিখিত। বেশ কঠিন একটি প্রযোজনা করেছে অভি। তার একটা বড় কারণ এর নাট্যভাষা। লিখিত টেক্সট মুহুর্তের মধ্যে গদ্য থেকে কাব্যে, কাব্য থেকে গদ্যে যাতায়াত করছে। বিষয়বস্তুর মধ্যে একধরণের আবহমানতা কাজ করছে। এবং সে আবহমানও যে আদপেই যতিহীন নয় তা টেক্সট বোঝাতে বোঝাতে চলেছে। মৃত্যু, প্রেম, যৌনতা, রাজনীতি, দর্শন, ঈশ্বর এবং অবশ্যই জীবন – না গল্পের মধ্যে হন্যে হয়ে ঘুরছে, মাথা কুটছে, ডুকরে উঠছে, শাসাচ্ছে, শ্লেষ করছে – অবরুদ্ধ এক যাপন যেমন শক্তিময়কে করে তোলে।