কলকাতা কমন্স

গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা আন্দোলনের দাবীসনদ, কথোপকথন-এ গৃহীত প্রস্তাবগুলির চূড়ান্ত খসড়া

রাজনৈতিক পরিবেশ ও অধিকার সংক্রান্ত

১। NRC CAA NPR-সম্পর্কে ভোটপ্রার্থী প্রতিটি দলকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। এই নাগরিক বৈঠক NRC-CAA-NPR প্রক্রিয়াকে সর্বাত্মক ভাবে বাতিল করার দাবী জানায়।

২। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশি হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।

৩। কলকাতা সহ গোটা রাজ্যে সভা সমাবেশ মিছিল করার অধিকার কেড়ে নেওয়ার মাধ্যমে মতপ্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা বন্ধ করতে হবে।

৪। রাজ্যে রাষ্ট্রদ্রোহিতা আইন ও ইউএপিএ আইন প্রয়োগ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।

৫। পুলিশের তদন্তকারী শাখা ও আইন-শৃঙ্খলা কার্যকরী করার শাখা পৃথক করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।

৬। ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিচারকদের সমস্ত শূণ্যপদ অবিলম্বে পূর্ণ করতে হবে এবং বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে।

৭। সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। মাওবাদী, SUCI সহ, জঙ্গলমহল এবং গোর্খাল্যান্ডে জাতিসত্ত্বার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের জন্য আন্দোলনের কারণে রাজনৈতিক বন্দীদের ওপর আরোপিত সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।

৮। মুসলিম সন্ত্রাসবাদী বলে অভিযুক্ত বন্দীদের অধিকাংশই শুধুমাত্র তাঁদের ধর্মীয় পরিচিতির কারণে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন। অবিলম্বে এই সমস্ত বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে।

৯। প্রান্তিক লিঙ্গ ও যৌনতার নাগরিকদের দাবীকে স্বীকৃতি দিতে হবে।

১০। জানখালাস বন্দীদের সমাজে পুনর্বাসিত করার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

১১। (বৃটিশ আমলের) জেলগুলিতে বন্দী, অভিযুক্ত, সাজাপ্রাপ্ত, বিচারাধীন বা বিচার না পাওয়া মানুষেরা মনুষ্যেতর অবস্থায় থাকতে বাধ্য হন। অবিলম্বে জেল সংস্কার করতে হবে।

১২। জঙ্গলমহলে অবিলম্বে যৌথ বাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে।

১৩। লালগড় আন্দোলনের সময় ভুয়ো সংঘর্ষের নামে অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। বিচারবিভাগীয় কমিশন তৈরি করে এই সমস্ত ভুয়ো সংঘর্ষে দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে।

১৪। সীমান্তবাসী মানুষের ওপর BSF-এর অত্যাচার বন্ধ করতে হবে।

বাঙালী ও পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী জাতিসত্ত্বাগুলির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রসঙ্গে

১৫। জঙ্গলমহল ও উত্তরবঙ্গে জাতিসত্ত্বাগুলির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রশ্নকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।

১৬। বাংলাভাষী সহ রাজ্যের সমস্ত জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার এবং সমস্তরকমের সরকারী কাজে তাঁদের মাতৃভাষার ব্যবহারের সুযোগকে নিশ্চিত করতে হবে। জোর করে হিন্দি চাপানোর চেষ্টা বন্ধ করতে হবে।

সুস্থ পরিবেশ-এর অধিকার

১৭। নতুন EIA আইন বাতিল করতে হবে।

১৮। বন্ধ কারখানার জমির চরিত্র বদল করে তাকে বাস্তু জমিতে পরিণত করা যাবে না। এই মর্মে আইন সংশোধন করতে হবে। এটা শিল্পের জন্য জমি সমস্যারও সমাধান বটে।

১৯। শহরগুলোর রাস্তায় আলাদা করে কার্যকরী সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করতে হবে।

২০। দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য, গাড়ী বিক্রি বাড়ানোতে কম উৎসাহ দিয়ে গণ পরিবহণ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।

২১। গাছ-কাটা, নদী সংস্কার ইত্যাদি কাজে পরিবেশের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য যথাযথ সরকারী উদ্যোগ নিতে হবে।

নারী অধিকার

২২। মহিলাদের জন্য সমকাজে সমবেতন নিশ্চিত করতে হবে।

২৩। নতুন শ্রম আইনে নারীর অধিকার খর্ব করা হয়েছে। রাজ্যে এই আইন কার্যকরী করা যাবে না।

২৪। ইচ্ছুক মহিলাদের জন্য অর্থনৈতিক স্বাবলম্বনের বন্দোবস্ত নিশ্চিত করতে সকলের জন্য স্থায়ী কাজের বন্দোবস্ত করতে হবে।

২৫। লিঙ্গ-সাম্য সংক্রান্ত শিক্ষা প্রাথমিক স্তর থেকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।

২৬। মেয়েদের পোষাকবিধি নিয়ে ধর্মীয় ও পুরুষতান্ত্রিক ফরমান জারি করার প্রবণতা আটকাতে সরকারকে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে।

২৭। অতিমারীর দিনগুলোতে কাজ হারানো মহিলাদের অবিলম্বে কাজের ব্যবস্থা করতে হবে।

২৮। সেল্ফ-হেল্প গ্রুপগুলোর জন্য বরাদ্দ ঋণে সুদের হার কমাতে হবে।

জীবন ও জীবিকার অধিকার

২৯। সকলের কাজের অধিকার ও ন্যূনতম আয় নিশ্চিত করতে হবে। সকলের জন্য ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করতে হবে।

৩০। সমস্ত রকম সরকারী কাজে ঠিকাদারের মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। সমস্ত কাজে স্থায়ী নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩১। প্রান্তিক মানুষদের অধিকাংশই ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত। এঁদের জীবন জীবিকার অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে। দুর্ঘটনাজনিত ক্ষেত্রে এবং কর্মক্ষমতা কমে এলে এঁদের জন্য সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং বন্ধ করতে হবে। ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং বন্ধ করার আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে কোন রকমের শিথিলতা দেখানোর অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে।

৩২। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মৎসজীবীরা দুর্ঘটনাক্রমে বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে গেলে, তাঁদেরকে দেশে ফেরানোর বন্দোবস্ত করতে সরকারকে তৎপর হতে হবে।

৩৩। সর্বস্তরের চুক্তি ভিত্তিক কর্মচারী দের জন্য অভিন্ন নীতি প্রণয়ন করতে হবে। তাদের নির্দিষ্ট সার্ভিস রুল চালু করতে হবে।

খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য-এর অধিকার

৩৪। খাদ্য সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিনামূল্যে সর্বজনীন রেশন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

৩৫। বিনামূল্যে সার্বজনীন শিক্ষার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে সকলের জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

৩৬। কোভিড-১৯-এর টীকাকরণকে বাধ্যতামূলক করা চলবে না। টীকা নেওয়ার ক্ষেত্রে নাগরিকদের পছন্দের অধিকারকে নিশ্চিত করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো রক্ষা

৩৭। কোন রকম নীতি বা প্রকল্প প্রণয়নে বা রূপায়নে রাজ্য সরকারকে অবান্তর করে তুলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোক লঙ্ঘন করার যেকোন উদ্যোগ প্রতিহত করতে কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে। রাজ্য সরকারকে, রাজ্যের হাতে অধিক ক্ষমতার দাবী তুলতে হবে। কেবল মাত্র মুদ্রা, যোগাযোগ এবং প্রতিরক্ষা কেন্দ্রের হাতে রেখে সব ক্ষমতা রাজ্যের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে প্রকৃত যুক্তরাস্ট্রীয় কাঠামো গড়ে তোলার দাবীতে কেন্দ্র সরকারের কাছে দাবী পেশ করতে হবে। জিএসটি-র নিয়ম থেকে বেরিয়ে এসে রাজ্যসরকার এই প্রক্রিয়াটা শুরু করতে পারে।

আমরা এই দাবীসনদগুলোকে কথোপকথন-এ গৃহীত প্রস্তাবগুলির চূড়ান্ত খসড়া বলছি। কারণ, আমরা মনে করি, এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এই দাবীসনদে অন্তর্ভুক্ত কোন দাবী নিয়ে কেউ দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। কেউ কোন সংযোজন প্রয়োজন মনে করতে পারেন।
ফেসবুকে এই দাবীসনদগুলো প্রকাশ করার পাশাপাশি, আমরা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছে এই দাবীসনদগুলো ইমেল করছি। বিভিন্ন পরিচিতির মাধ্যমে চেষ্টা করছি, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এই দাবীসনদ পৌঁছে দিতে এবং তাঁদের মতামত জানতে।
এখানে যে কেউ এই প্রক্রিয়াটাকে আরও ফলপ্রসূ করে তোলার উদ্যোগে সহায়তা করতে পারেন।
১। দাবীসনদগুলো সম্পর্কে তাঁর/তাঁদের মতামত জানিয়ে। কোন দ্বিমত থাকলে তা জানিয়ে। কোন সংযোজন-বিয়োজনের পরামর্শ থাকলে তা জানিয়ে।
২। সংশ্লিষ্ট আরও মানুষকে এই দাবীসনদ তৈরির প্রক্রিয়ায় সামিল করে, আরও পরামর্শ, মতামত পেতে ও সুস্থ বিতর্কের অবকাশ তৈরি করে।
৩। এই দাবীসনদগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তাদের প্রতিনিধিদের গোচরে এনে, তাঁদের মতামত ও প্রতিক্রিয়া পেতে।
সকলকে ধন্যবাদ।

গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা আন্দোলনের দাবীসনদটি নিয়ে আপনার যদি কোন মতামত/পরামর্শ থাকে, তাহলে এখানে লিখতে পারেন। https://forms.gle/XqDAAcLZen87qM1g6

এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত যে কোন লেখালেখি, সেটা কলকাতা কমন্স-এর বক্তব্য হোক বা কোন ব্যক্তি-র, সেটা, সেই বিষয়ে, একটা ধারণা তৈরি করার প্রক্রিয়ার অংশ।চূড়ান্ত কোন অবস্থান নয়, একটা অবস্থানে পৌঁছনোর চেষ্টা।

তাই, এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত 'কলকাতা কমন্স’-এর যে কোন লেখা যে কেউ, প্রয়োজন বুঝলে, অন্য যে কোন জায়গায় ব্যবহার করতে পারেন। আমরা সেই ব্যবহারটা জানতে আগ্রহী।তাহলে এই চর্চা তৈরির চেষ্টাটা আরও ফলপ্রসূ হয়।

যে লেখাগুলো কলকাতা কমন্স-এর নয়, কোন ব্যক্তির নামে প্রকাশিত, সেখানে, বক্তব্যটা একান্তই লেখকের নিজস্ব। আমরা সেই বক্তব্যটা চর্চার প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি। এই লেখাগুলো আমরা লেখকের অনুমতিক্রমে প্রকাশ করি। সেগুলো অন্য কোথাও ব্যবহারের দায়িত্ব আমাদের পক্ষে নেওয়া সমীচীন নয়।

আর এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত যে কোন লেখা সম্পর্কে যে কোন প্রতিক্রিয়া কে আমরা স্বাগত জানাই।

আমাদের ইমেল করতে পারেন, commons@kolkatacommons.org তে।