কলকাতা কমন্স


রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের পর বুদ্ধদেব বসু দাবী জানিয়েছিলেন রবীন্দ্র পুরস্কার চালু হোক। রবীন্দ্রনাথের প্রতি বাংলার সম্মান জানানোর জন্য জরুরী। ১৯৪১-এই জানিয়েছিলেন। ১৯৪৪-এ আবার 'কবিতা'র সম্পাদকীয়তে লিখলেন। ১৯৫৫-তে রবীন্দ্র পুরস্কারের ঘোষণা হল। অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে তদ্দিনে। বুদ্ধদেব সেই ঘোষণায় অত্যন্ত রুষ্ট এবং ব্যথিত হলেন। লেখকদের 'প্রার্থী' হতে হবে। জীবনীপঞ্জী লিখে দিতে হবে। দু'জন সুপরিচিত বৈজ্ঞানিক বা সাহিত্যিকের সুপারিশ না থাকলে তা গ্রাহ্য হবে না। বারো কপি বই জমা দিতে হবে। বুদ্ধদেব একে 'বকশিশ বলেই এসব কুশ্রী শর্ত' বলেছিলেন। সাহিত্যিকরা অসহযোগ করুন চেয়েছিলেন। সে সব কিছুই হয়নি। রাজার দরবার বলে কথা। খুঁজে দেওয়া যাবে না পুরস্কার। পুরস্কৃত হতে ভিক্ষে চাইতেই হবে। এ ব্যবস্থাই স্থায়ী হয়ে গিয়েছে? পাল্টে গিয়েছে ব্যবস্থা? নাকি বছর বছর এভাবেই নানা পুরস্কারে আবেদন-নিবেদন-সুপারিশ খেলা চলতেই থাকে? জানতে ইচ্ছে করে না? আমার তো ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে।
দীর্ঘ কবিতা সম্পর্কে যা মনে হয় - Subho Maitro ভাগ্যিস কবিতা কী তাই ভেবে কেউ কবিতা লেখে না – দীর্ঘ কবিতা নিয়ে অনেক কথা শোনা যায়, অনেক রকম যুক্তি ও তক্ক তা জেনে লিখতে গেলে আমার কবিতা লেখাটাই হত কি না সন্দেহ। আমি দীর্ঘ কবিতার চেহারা নিয়ে ভাবিত ছিলাম না কখনো, এখনো নেই। মূলত কথন (ন্যারেটিভ) নিয়ে ভাবনা চিন্তা করতে করতে মনে হল দীর্ঘ কবিতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। এবং তা কোলাজ নির্ভর। এবং তা খণ্ডিত কথনও বটে। এখন বুঝতে পারছি এক কথায় এজরা পাউন্ড যা বলেছিলেন আমারও তাই মনে হয়েছে – টেল অফ দ্য ট্রাইব যদি ব্যখান করতে হয় তো দীর্ঘ কবিতার প্রয়োজন। আমার ব্যক্তিগত আবেগ উচ্ছ্বাস ভরা এলিজিয়াক বাংলা কবিতার একটা ক্লান্তি তৈরি হচ্ছিল, এবং তার সবচেয়ে বড় সমস্যা মনন দিয়ে ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে নিজের অবস্থানের সম্পর্ক বা সম্পর্কের অনুপস্থিতিকে দেখায় না। দীর্ঘ কবিতাকে মনে হয় একটা প্রেক্ষিত তৈরি করতে পারে সেদিকে এগোনোর। তবে কোনো রকম রোম্যান্টিক, এপিক-ধর্মী ছন্দ নির্ভর একটা শ্রবণানন্দ তৈরির চেষ্টা করাটাও তো বোকামি মনে হয়। একটা গল্প বলা হয়েছে বা একটা রোম্যান্টিক মন্ত্রধর্মিতা তৈরি হয়েছে মিথটিথ ঢুকিয়ে যেটা খুব আকর্ষক নয়। এবং সেগুলো দীর্ঘ কবিতা সম্পর্কে ভুল ধারণাও তৈরি করেছে, তাই হয়তো আমাদের সময় দীর্ঘ কবিতা লেখার চেষ্টা অনেক কম। দীর্ঘ কবিতা মানেই এপিক নয়, বা একটা লিনিয়ার ন্যারেটিভ তৈরি নয়। অন্তত আমাদের সময়ে নয়। কবিতার শরীরে গল্প বলাকে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া বা ইংরেজ রোম্যান্টিকদের মতো যেমন শেলি বা ওয়ার্ডসওয়ার্থ, কোনো উল্টো মহাকাব্য এখন আর দরকার নেই। সঙস অফ মাইসেল্ফ বা ওয়েস্টল্যান্ড যেমন বা কান্তো জেনারাল বা আইলা নেগ্রা – এদের মতো কোলাজ নির্ভর আধুনিক উপস্থিতি প্রয়োজন। ডেরেক ওয়ালকট-এর বাউন্টি যেমন। লিরিকালিটি ও এলিজিয়াক জায়গা থেকে সরে আরো খণ্ডিত কথন তৈরি ও গদ্যময় বৌদ্ধিক উপস্থিতিতে দীর্ঘ কবিতা অনেকটা সাহায্য করে। বহুস্বরের আনাগোনা ঘটানো সম্ভব এধরনের কবিতায়। এগুলো নিয়ে কাজের অনেকটা জায়গা রয়েছে বাংলা কবিতায়। তবে সময় সাপেক্ষ সে কাজ। দীর্ঘ কবিতার প্রকল্প দু'এক দিন বা দু’এক মাসের ব্যাপার নয়। বহু বছর লাগে, অনেক সময় গোটা জীবন। এই একটু একটু করে হয়ে ওঠাটাও আমাকে আকৃষ্ট করে। কোনো ফাইনালিটি নেই, আস্তে আস্তে বদলাচ্ছে বেড়ে উঠছে যেন সত্যিই লিভস অফ গ্রাস, একটা অরগ্যানিক উপস্থিতি। এটাও খুব আকর্ষক ব্যাপার একজন ব্যক্তি লেখকের কাছে। এভাবে কবিতাকে ভাবা যায়। একটা নিরন্তর সৃষ্টির মধ্যে রাখা যায়। ফাইনালিটির দায় রইল না, বরং ক্রমশ পরিবর্তনশীল একটা জীবন্ত চেহারা তৈরি হল।

এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত যে কোন লেখালেখি, সেটা কলকাতা কমন্স-এর বক্তব্য হোক বা কোন ব্যক্তি-র, সেটা, সেই বিষয়ে, একটা ধারণা তৈরি করার প্রক্রিয়ার অংশ।চূড়ান্ত কোন অবস্থান নয়, একটা অবস্থানে পৌঁছনোর চেষ্টা।

তাই, এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত 'কলকাতা কমন্স’-এর যে কোন লেখা যে কেউ, প্রয়োজন বুঝলে, অন্য যে কোন জায়গায় ব্যবহার করতে পারেন। আমরা সেই ব্যবহারটা জানতে আগ্রহী।তাহলে এই চর্চা তৈরির চেষ্টাটা আরও ফলপ্রসূ হয়।

যে লেখাগুলো কলকাতা কমন্স-এর নয়, কোন ব্যক্তির নামে প্রকাশিত, সেখানে, বক্তব্যটা একান্তই লেখকের নিজস্ব। আমরা সেই বক্তব্যটা চর্চার প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি। এই লেখাগুলো আমরা লেখকের অনুমতিক্রমে প্রকাশ করি। সেগুলো অন্য কোথাও ব্যবহারের দায়িত্ব আমাদের পক্ষে নেওয়া সমীচীন নয়।

আর এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত যে কোন লেখা সম্পর্কে যে কোন প্রতিক্রিয়া কে আমরা স্বাগত জানাই।

আমাদের ইমেল করতে পারেন, commons@kolkatacommons.org তে।