কলকাতা কমন্স

১। শেষ দুপুর থেকে শরতের চিলতে ফিচকে রোদটা সল্টলেকের ওই বইঘরটাতে খেলে বেড়াচ্ছিল। সেখানেই সূত্রপাত হল আড্ডার। যে আড্ডা স্থানান্তর করে চলেও গেল খানিকবাদেই বাঁধা মন্ডপে। শুরু করলেন অঞ্জন সেন, কালে কালে দুর্গার আইকনের বিবর্তন নিয়ে। সঙ্গে অজস্র ছবি দেখানোর জন্য। একচালা থেকে আলাদা আলাদা চালায় দুর্গা, এক মাথা থেকে দশমাথা দুর্গা (রাবণের মত), আট থেকে আঠারো হাত এবং আঠারো পা বিশিষ্ট দুর্গার কথাও চলে এল। সঙ্গত করে যাচ্ছিলেন প্রিয় প্রতুলদা। কথায় কথায় বললেন কোথাও কোথাও সিংহকে দেখতে আবার ঘোড়ার মত হয়। অঞ্জনদা বললেন সিংহ কিন্তু সিংহ নয়, আসলে বিষ্ণু। সঞ্চালনা করতে করতেই তো শিখছিলাম। চট করে জানতে চাইলাম, ঘোড়া কেন?ঘোড়া কেন বা কালিঘাটের একটি পটে দুর্গা কালো কেন, এ সবের উত্তরে অঞ্জনদা চলে গেলেন শাক্ত মতের কাছে। আমি চললাম আরো পিছিয়ে। যখন উত্তর-পশ্চিমে ইন্ডো ইরানিয়ান বা ইন্ডো-ইউরোপিয়ান, সঙ্গে লোহার জ্ঞান আর ঘোড়া নিয়ে আসা। তাহলে কি এখানেও ঘোড়াতেই একদিন...? আদিত্য, নামকরা আইনজীবি এবং অ্যাক্টিভিস্ট প্রশ্ন রাখলেন এরিয়ান ইনভেশন থিয়োরী নিয়ে। ধরতাইতে আমিও ধরলাম, ইনভেশন তো সর্বত্রই হয়েছে। কেন না সব জায়গাতেই মানুষ উদ্ভূত হয়নি। কাজেই ইনভেশনে সমস্যা কোথায়? এ সব আলোচনার সূত্রেই চলে এল প্রতুলদার বক্তব্য, আমরা তো অসুর, দুর্গা কেন আমাদের পূজো হতে যাবে? বরং এই যে সে কালে মেয়ে খুব কষ্টে সৃষ্টে বছরে একবার বাপের বাড়ি আসতে পারে সেইটাই ওনাকে টানে। দুর্গা না, উমাই আসলে আমাদের ভাবনার কাছে। এবং এ প্রসঙ্গে এসে গেল যে দুর্গার থেকে তাঁর ছেলেমেয়ে বলে পরিচিত দেবদেবীদের বয়সের কথা। লক্ষ্মী এবং সরস্বতী অবশ্যই বড়। গণেশও। এবং এত শত কথা এলে অবশ্যই আসে লোকগানে উমার নানা কথা। সে পরিবেশনার জন্য ছিলেন 'ভ্রমরা'-র শিবব্রত কর্মকার। লোকগানের কথায় যেতে গেলে চলেই আসে লোক সংস্কৃতিতে নারীর ভূমিকা। সে কথায় লীনা চাকী বারেবারে আক্ষেপ করলেন চৈতন্যের সময়ের অব্যবহিত পরেই জাহ্নবা দেবীদেরও দীক্ষা দেবার অধিকার ছিল, যা কালে কালে বৈষ্ণবদের ব্রাহ্মণ্য স্রোতে বেশী গা ভাসানোতে চলেও গেল। এবং শুধু তাই না তান্ত্রিকদের মধ্যে নারীকে সাধন সঙ্গিনী করে তাঁদের সাধনার সিদ্ধিলাভের সুবিধে, নারীদের কি? এ জাতীয় কথাও উঠে এল! এখানেই লিঙ্গ ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গীর কথা তুললেন অপর্ণা। বললেন আমাদের নারী-পুরুষ এই দ্বিবিভাজনের বাইরে থেকে তাঁর তো কালীর লিঙ্গ নিয়েও প্রশ্ন আছে। এবং লীনাদিও প্রশ্নটা রাখলেন যে সব পুরুষ সৃষ্টি করছেন এক নারী, তাঁকে শক্তি দিচ্ছেন, এমতাবস্থায় দুর্গাও কতটা নারী! আমার যেমন ফুট কাটা স্বভাব। খানিক বাদেই জুড়ে দিলুম যে আলোচনাটায় নারীর শক্তি পুরুষ দিচ্ছে ভাবার পাশাপাশিই যদি ভাবা যায় যে বনবিবির পালায় নারায়ণীর সৈন্যরা কিন্তু অনেকেই নারী। তথাকথিত নিম্নবর্গের, তাই আমাদের আলোচ্য পরিধিতে এই যোদ্ধৃ নারীরা আসেন না, তাহলে কি দুর্গার নারীই হবার কথা না? এমন সব কথা এবং আলোচনার তুফানের মধ্যে স্থান অধিকার করলেন চপল ভাদুড়ি। তাঁর অননুকরণীয় ভঙ্গিমায় ছোট্ট পরিসরের মধ্যেই একক অভিনয় করলেন শীতলা পালার। এবং চপল ভাদুড়ি যে কেন আজ-ও চপল ভাদুড়িই, কেনই বা ষাটের-সত্তরের দশকে সর্বাধিক পারিশ্রমিক পেতেন নারী চরিত্রের, কেনই বা প্রয়াত ঋতুপর্ণ থেকে কৌশিক সকলেই তাঁকে নিয়ে কাজ করেছেন সে আজ-ও, এই পঁচাত্তরের অভিনয়েও বুঝতে পারা যায়। সব শেষে যাবার সময় আমাকে বললেন, 'তুমি নিমাই নিতাই দুই করতে পার।'। খুব কাছের থেকে মুখ দেখতে দেখতে বলছিলেন। 'জগাই-ও করতে পার'। জানি হবে না হয়তো, তবু বলে ফেললাম 'আপনি শচীমাতা করলে আমি একদিন নিমাই করার চেষ্টা না হয় করব।' মুখটা হালকা করে ছুঁলেন। হাসলেন। প্রাজ্ঞ এবং দক্ষ প্রবীণের স্পর্শে শিশির যুগ থেকে আজকের থিয়েটারের পরিক্রমা বোধহয় একবারের জন্য হলেও আমাকে ছুঁয়ে গেল। সারাদিনে এ আমার সেরা পাওনা।

২। উঠোনে অনুষ্ঠানটা শুনতে শুনতে আর গৌতমদা (গৌতম বসুমল্লিক)-এর সঙ্গে সঞ্চালনা করতে করতে দেখছিলাম আকাশটাতে কী আশ্চর্য রঙের মাতন লেগেছে। একদিকে গাঢ় হয়ে এসেছে নীল, কালচের দিকে, অন্যদিকে খুনে লাল। আর শরতের সাদাও পিছলে তার মধ্যিখানে। তখন বলছিলেন অজিত কুমার হেমব্রম। মহিষাসুর নিয়ে খেরোয়ালদের মধ্যে যে দাসাই মাসে শোকের প্রচলন আছে তাকে সঙ্ঘবদ্ধ করার কাজ করেছেন তিনি। সেই শোককে মূর্ত্ত করতে মূর্ত্তি বানিয়েছেন, পূজো না। অনেকেই অসুর পূজো কথাটা খুব চট করে ব্যবহার করেন। আজ্ঞে না। অজিত কুমার সারা ভারত ঘুরে বেড়াচ্ছেন এ কথা জানাতে যে তাঁরা পূজো করেন না, প্রতিবাদ করেন। তাঁদের বীর হুদুড় দুর্গা। তাঁর বয়ান অনুসারে উত্তর-পশ্চিম থেকে সরতে সরতে যখন তাঁরা ক্রমে আরো পূর্বের দিকে চলে আসছেন তখনও এই বীর হুদুড়কেই একমাত্র পরাস্ত করা যায়নি। তিনি বলছেন তাঁদের মৌখিক পুরাণ ভাষ্যে সরস্বতী আছে, সিন্ধু আছে আর আছে বাহে - যা রক্তরঙা জলাশয়। তাঁর ভাবনায় সে হয়তো লোহিত সাগর। কোন একদিন সেখানে তাঁদের বসতি হয়েছে হয়তো, আফ্রিকা থেকে এ দেশ অবধি আসার পথে। তাঁরাও এ মাটিতে বহিরাগতই। কিন্তু এসেছেন হয়ত সকলের আগে। পরের আগন্তুকদের জায়গা ছাড়তে ছাড়তে সরেছেন, পাল্টা জায়গা দখল করার লড়াই করেননি। সেই আত্মরক্ষামূলক লড়াইতেই হুদুড় দুর্গা-কে পরাস্ত করা যখন যাচ্ছিল না - তখন এক নারীকে তাঁর সঙ্গে বিবাহ দেওয়া হয়। সেই নারী দেবতাদের প্রেরিত। যাঁকে আজ আমরা দুর্গা বলে পূজো করি তিনি সেই বিবাহ এবং প্রেমের সুযোগ নিয়ে হত্যা করেন বীর হুদুড়কে। হুদুড়, সান্থালদের প্রথা অনুযায়ী নারীর সঙ্গে যুদ্ধ করেন না। এই সুযোগে হত্যা। এবং সেই হত্যার উৎসব বিজয়ীরা করতে পারে, বিজিত তাঁরা, তাঁরা পারেন না। পাঠক, আমরা এর সঙ্গে একমত কী একমত না তা বিবেচনার আগেও কথা আছে। সান্থাল সমাজে ইস্কুল-কলেজের শিক্ষার হার অতি কম। সেন্সাস রিপোর্টে যে তাঁদের হিন্দু করা হয়েছে তা তাঁদের অজ্ঞতার ফল। তাঁদের নানা দেব-দেবী আছেন, কিন্তু ধর্মের কোনো নাম নেই। যেমন সব প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের নাম আছে, সে থেকে তাঁরা দূরে থাকেন। তাই প্রতিষ্ঠিত ধর্মের পরিসরে এঁদের টেনে আনা হয়েছে হিন্দু বলে। এই অভিমত অজিত কুমার হেমব্রমের। অসুর পূজো হচ্ছে দুর্গার বিরুদ্ধে এবং দুর্গা অবমাননা করে, এই অভিযোগে তাঁরা অভিযুক্ত হয়েছেন খোদ ভারতের সংসদ-এ। যদিও এ পূজো না, শোক পালন, যদিও আসলেই তাঁদের এ শোক পালন একপ্রকার পরাজয় স্বীকারের কষ্ট জড়িত এবং স্বাধিকার ও পৃথক সংস্কৃতি গৃহিত না হওয়ার বঞ্চনা উদ্ভূত, তবুও এ অভিযোগের আঙুল ওঠে তাঁদের দিকে। অথচ তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী তাঁদের কথিত পুরাণে আছে এক সমৃদ্ধ চম্পা দেশের কথা। আছে নগর সভ্যতা, শিক্ষা ও বাণিজ্যের কথা। আজ সে সব কিছুই নেই। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী তাঁরা আজ-ও ব্যবসার চালাকিতে সক্ষম না বলে ডুবে যাবেন ব্যবসা করতে গেলে। অজিত কুমার হেমব্রম মূলবাসীদের বঞ্চনার ভাষ্য থেকে আরেকটু এগিয়ে উত্থানের এক প্রতিভাষ্য রচনা করতে চেষ্টা করছেন। হুদুড় দুর্গার কাহিনীকালে আকাশের রঙের ওই ভয়াবহ অথচ বিষ্ময়কর খেলা আমাকে মনে করাচ্ছিল যে কত রক্তস্রোত এবং বঞ্চনার বুনিয়াদে দাঁড়িয়ে আছে এই হিঁদুয়ানির গর্ব। সে কী বাইরেই শুধু বইয়েছে বঞ্চনার স্রোত? ঘরের মধ্যে না? নাই যদি বইয়ে থাকে তাহলে কেন 'মেঘে ঢাকা তারা'র নীতাকে জন্মাতে হয়েছে সেলুলয়েডের ফ্রেমে? কেন নীতাকে সব দিতে দিতে ক্রমে অতিলৌকিক হয়ে উঠতে হয়েছে, হতে হয়েছে সেই দেবী, যাঁর পূজো আমরা করব এবং সেই দেবী ঘরের মধ্যে আগত ঝড়ের দিনে আর আমাদের দিকে তাকাবেনও না। 'যে রাতে মোর দুয়ারগুলি' গানের দৃশ্যায়নের শেষাশেষি অত্যন্ত লো অ্যাঙ্গেল থেকে নেওয়া শটের মধ্যে নীতা কেন আর দর্শকের চোখে চোখ না রেখে মন্ডপের প্রতিমার মত এক দূরের দিকে চেয়ে থাকে? সে দেবী হয়ে উঠেছে বলেই না! বোঝাচ্ছিলেন সঞ্জয়দা (সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়)। অথচ সেই নীতাকেই ঋত্বিক যখন শেষের আগের দৃশ্যে যক্ষার স্যানিটোরিয়ামে দেখান তখন তাঁর জন্য ব্যবহার করেন টেলিফটো লেন্স, যাতে প্রেক্ষাপটের সঙ্গে মিশে যায় নীতা, যেন সে আটচালার মধ্যে থেকে রিলিফের মত করে বেরিয়ে থাকা দুর্গাপ্রতিমাটি, এমন দেবীত্বের মধ্যেই ভাঙে নীতা। মানবী হয়ে যায়। চিৎকার করে মনে করিয়ে দেয় যে সে কিন্তু বাঁচতে চেয়েছিল। তার প্রিয় দাদাও এসে তার কাছে জানতে চায়নি সে কেমন আছে! বরং তাকে উত্তেজিত করা যাবে না এই সাবধানবাণী শোনার পরেও তাকে বলে, কেমন করে তাদের বাড়িটা দোতলা হয়ে উঠেছে, কেমন করে তাকে ঠকানো প্রেমিকটি তারই বোনের গর্ভে জন্ম দিয়েছে একটি শিশুর, যে ক্রমে বেড়ে উঠছে আনন্দের স্রোত হয়ে। নীতা/নীতারাও কী চায়নি বাঁচতে, সংসারের আলো-হাওয়ায় নিশ্বাস নিয়ে? সম অধিকার এবং মর্যাদা নিয়ে? দুর্গার প্রতীক হতে হতে প্রতীক ভাঙা নীতার থেকে কতদূরে অসুররাজার জন্য শোক? ঠিক এইখানেই উঠে আসে আরো প্রশ্ন! যদি কোনো নারী নীতার আখ্যান রচনা করতেন তাহলে কী দেবীই করে তুলতেন? অথবা যদি নারী-পুরুষের বাইরে যাঁরা তাঁদের লড়াইটা যদি বোঝা যায় তাহলে তাঁরা তো আরও প্রান্তিক অবস্থানে এবং আক্রান্তও! তাঁরাও তো অধিকারহীনদের দলে, যাঁদের দীর্ঘ শোকচ্ছায়া ছাড়া কিছুই নেই। সে কথার অবসর আসবে কোন শোক পালনে? কেন আসবে না উৎসবে কোনোদিন, যে উৎসব ধর্মাচারেরও বাইরে, মানবিক উৎসব? এ পাড়ের বাঙালির ইংরেজীয়ানা নিয়ে যখন বলছিলেন সুগায়িকা এবং সংবাদ পাঠিকা ইন্দ্রাণীদি তখন আমাদের প্রিয় শিক্ষক পবিত্র সরকার ইঙ্গিত করছিলেন এ যে শ্রেণীগত অবস্থান এবং অতিনাগরিক এক অসুখ তার দিকে। তারই সূত্রে কলকাতা বিশেষজ্ঞ গৌতমদা, প্রখ্যাত সাংবাদিক শঙ্করলালদা সকলেই ভাষা এবং বাঙালির সমস্যা নিয়ে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে আলোকপাত করছিলেন। চুপচাপ শুনছিলেন অজিত কুমার হেমব্রম। অনেক পরে ওঁকে বলছিলাম যে এই জাতীয়তাবাদ নির্মাণ একদা আমরা করেছি এবং সেই জাতীয়তাবাদের দিনের জোয়ার সরে গিয়ে এখন পাঁকের সময় এসে গিয়েছে। এমনই ভাবে ওনার অসুর মূর্ত্তি কোনো এক আগামীতে যে কেউ পূজোই করতে শুরু করবে না, প্রতিষ্ঠানের রূপ নিয়ে সান্থাল সমাজে আরো শোষণের ব্যবস্থা করবে না, তার নিশ্চয়তা কি? আমরা সকলেই যখন ক্রাইসিসে আক্রান্ত তখন পারস্পরিক শিক্ষা বিনিময় কেমন করে সম্ভব? এ আলোচনা থামল এক সময়। উদাসীন রাজপথ দিয়ে ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম যে এ তো সহজে হবার না। আমার তোলা এই প্রশ্নের উত্তরে অজিত কুমার হেমব্রম জানাচ্ছিলেন যে তিনি পাশাপাশিই চেষ্টা করছেন সান্থাল সমাজের নবীন প্রজন্মকে ক্রমে কু-সংস্কার মুক্ত করতে, বিজ্ঞান মনস্ক করতে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে যা ঘটছে তার থেকে শিক্ষা নিয়ে সংশোধন করতে। যেমন একবার অনেকেই থালায় করে মূর্ত্তির সামনে প্রসা্দের জন্য এনেছিলেন। উপোস চেয়েছিলেন বামুন এবং মেয়েরা। উপোস করতে দেননি তিনি। প্রথমবার আধথালা রেখে বাকীটা ফেরত দিয়েছেন। পরের বার এমন ভাবে প্রচার করেছেন যাতে কেউ প্রসাদের কথাই না ভাবে, কেন না তা পূজার অঙ্গ হয়ে যাবে। এ কথা শুনতে শুনতেই পবিত্রদা বলে উঠলেন তাহলে এক নব্য পুরোহিত দর্পণ ওনাকে রচনা করতে হচ্ছে। তা তো না। পূজোই নেই যখন তখন পুরোহিত কোথা থেকে আসে? কিন্তু আমাদের কেতাবী শিক্ষা আর জীবনাচারের শিক্ষার মধ্যে এ ফারাক বস্তুত রয়েছে। যে জীবনকে আমরা দীর্ঘকালীন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় জানি না, তাকে আমরা আমাদের ভাবনায় অনুবাদ করে নিই। তা করতে গিয়ে মূল বয়ান থেকে সরতে থাকি। অজিতভাই-এর/দের চেষ্টার মধ্যে অবশ্যই কিছু নড়বড়ে বিষয় আছে। কিন্তু সে তো শিশু চলতে শুরু করতে গেলে অমনই হয়। তার মানে সে পাকা সড়কের বাঁধা গতে আসেনি এখনো। এবং ঠিক তাই তার চলার সংস্কারের সুবিধে আছে, যা শৈশব অতিক্রান্তদের জন্য ক্রমে কঠিন হতে থাকে। অতএব একে অনুবাদ করে আমাদের ভাষা কাঠামোতে বসিয়ে দিলেই বোধহয় কাজটা সঠিক হয় না। হয় না যে তা এক রকম বুঝেছি একেবারে শেষে। ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় আমি যখন অজিতভাই-এর হাত ধরতে হাতটা এগিয়ে দিয়েছিলাম, বেশ কিছুক্ষণ সময় নিলেন বাড়ান হাতটা ছুঁতে। কয়েক সহস্রাব্দের দূরত্ব আছে আমাদের যে। আমরা শত্রু না মিত্র, সে সম্পর্ক একমাত্র নির্ধারিত হতে পারে আমাদের কাজের মধ্যে দিয়ে। যে সকল অস্তিত্বকে আমরা আজ কিছু হলেও বুঝতে পারছি 'অপর' হিসেবে তাকে আপন করার কাজ বিন্দুমাত্র সহজ না। সেরা আয়োজিত এই আলোচনা চক্র নিতান্তই প্রাথমিক পা ফেলা মাত্র। বাকী জীবন এ দায় যদি আমরা সকলে সচেতনভাবে বইতে পারি তাহলে হয়তো আকাশ রক্তাক্ত হলে অন্য কোন দিন অন্য কেউ আর রক্ত ভাববে না, ভাববে পলাশ ফুটেছে বসন্তে।

৩। এ বারের পর্ব শুরু করার আগে কতগুলো কথা এখানে পরিস্কার করে নেওয়া ভাল। শিবেন্দু মান্না থেকে শুরু করে সকল আলোচকদের নানা বিষয় নিয়ে পূর্বপক্ষ ধরে নিয়ে আমাকে কিছু কিছু মতকে খণ্ডনও করতে হচ্ছে। সে সব করার সময় যে কথা আমার মাথায় থাকে তা হল এঁদের অসামান্য অবদানের কথা। একটু ব্যক্তিগত আলাপচারিতা দিয়ে শুরু করি তাই। বহু বছর আগে, সম্ভবত ১৯৯৪ সাল হবে, 'আর্কিওলজি অব বেঙ্গল' নামের এক বিপুল তথ্যচিত্রের কাজ শুরু করেছিলাম। শেষ করতে পারিনি। এবং যথারীতি সেগুলো গিয়েছে সেই প্রযোজনা সংস্থার বদৌলত কালের গ্রাসে। সদ্য যুবক তখন। স্বল্প জ্ঞানে সমুদ্রে ভাসিয়েছিলাম ভেলা। এখন হলে বোধহয় ওভাবে করতাম না। যাই হোক, করতে গিয়ে দেখেছিলাম যে বাংলার প্রত্নক্ষেত্রগুলোর হাল ঠিক কেমন! বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সে সব ক্ষেত্র একটি বেড়া দিয়ে ঘেরা এবং ভারত সরকারের আর্কিওলজি বিভাগ থেকে একটি বোর্ড ঝুলছে। কোনো খননের কোনো প্রশ্নই নেই। আগ্রহ থাকলে এদ্দিনে সে সব করে ফেলা যেত। সরকারী স্তরে কেউ-ই খুব উৎসাহী বলে আজ-ও আমার মনে হয় না। এবং এবারেও এক প্রত্নইতিহাসের মানুষ অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় বলছিলেন যে তিনি দেখেছেন (আমিও জানি) গ্রাম গ্রামান্তরে যাঁরা এ কাজ করেন তাঁদের কাছ থেকে ভুলিয়ে ভালিয়ে মিথ্যে বলে কিছু সরকারী স্তরের অসাধু লোক কেমন করে সেখান থেকে এঁদের কষ্ট করে উদ্ধার করা সামগ্রী বিদেশে পাচার করে দেয়। এই নির্লজ্জ এবং লোভী দেশে, শিবেন্দু মান্নাদের মত মানুষ যে বিপুল প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করেন তা প্রত্যক্ষ ভাবে না জানলে বুঝতেই পারা যাবে না বাংলা তথা বিশ্বের ইতিহাসে এঁদের অবদান কী বিপুল। দারিদ্র, পরিশ্রম, একাকীত্ব, এমন কী মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে এঁদের কাজ করে যেতে হয়। নিরলস কাজ সে। খুব কম জায়গা থেকে এঁরা তার মূল্য পেয়েছেন বা পেয়ে থাকেন। কলকাতার বিদ্বৎ মহলে সামান্য জায়গা, বাকী জ্ঞানচর্চার সমাবেশে প্রায়শই একধরণের উপেক্ষা, এবং তথাকথিত শিক্ষিত মহলে স্রেফ অস্তিত্ব-অজ্ঞতার শিকার হয়েও এঁরা কী এক ক্ষ্যাপামিতে, অসীম কৌতুহলে কাজ করে চলেন। তাই, যখন আমাকে এঁদের কোথাও খণ্ডন করতে হয়, সে খণ্ডণ সকলের আগে আমাকেই ব্যাথা দেয়। এঁরা ব্যতীত, আমার আজকের জানাটাটুকুও হয়ে উঠত না। এঁরা সকলেই শিক্ষক আমার। সিরা এ কারণের ধন্যবাদার্য যে এঁদের সঙ্গে সম্মুখ সাক্ষাৎ-এর একটি পরিসর বানিয়েছিলেন বিবেচনা করে। আবারও শিবেন্দুদার কথা দিয়েই ফিরি আলোচনায়। প্রস্তাবনায় বলেছিলেন, "আনুমানিক খৃষ্টপূর্ব প্রথম শতকের মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত, পোড়ামাটির ফলকে উৎকীর্ণ একটি নারীমূর্তী পাওয়া গিয়েছে, যেটি বিশেষজ্ঞ মতে ‘দেবী মহিষমর্দিনী’র হওয়াই সম্ভব। পরবর্তীকালেও অনুরূপ মাতৃমূর্তী পাওয়া গিয়েছে, যেগুলিতে সুস্পষ্ট চিত্রও খোদিত হয়েছে। এক্ষেত্রে স্মরন রাখা দরকার যে তখনও পর্যন্ত শিল্পশাস্ত্র ও পুরাণাদি শাস্ত্রগ্রন্থ রচিত হয়নি। তাহলে কিভাবে শিল্পশাস্ত্রাদি রচনার পূর্বেই মাতৃমূর্তী মহাদেবী মূর্তী নির্মীত হল? প্রশ্ন হচ্ছে এটা কেমন করে সম্ভব হল?" দীর্ঘ এই উদ্ধৃতি তুলে আনলাম এই কারণে যে আমাদের একটি কথা এখানে স্মরণ করার প্রয়োজনীয়তা আছে ভীষণ ভাবেই, তা হল গান্ধার শিল্পের কথা। কোচবিহার থেকে ভান্নানি দুর্গা নিয়ে বক্তব্য রাখতে এসেছিলেন দীপক রায়। তিনি এ সব আলোচনার মধ্যেই বলেছিলেন যে আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমরা সব আলোচনাকেই নিয়ে চলে যাই বেদ-পুরাণে। কথাটি সঙ্গত। ভারতীয় শিল্পশাস্ত্র তখনও তৈরী না হলেও খৃষ্টপূর্ব প্রথম শতক গান্ধার শিল্প শুরু হয়ে গেছে। এ নিয়ে মারিও বুসাগ্লি বহুদিন আগেই 'লা আর্ট দু গান্ধার'-এ নানা উদাহরণ এনে এ কথা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ ছাড়াও সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার পোড়ামাটিতে উৎকীর্ণ নানা নারীমূর্ত্তি বা মাতৃকামূর্ত্তি আমরা ভুললে হবে না। হরপ্পার সিলে যে ডেপথ অফ ফিল্ড, আলোর বৈশিষ্ট্য এবং থ্রী ডায়ামেনশনাল ভল্যুম সম্পর্কে পাশ্চাত্য ধারণা ছিল না তা আজ চোখে দেখা যায়। এও দেখা যায় যে গান্ধার শিল্পে গ্রীক প্রভাবে এগুলো অন্যরকম চেহারা নিয়েছে। আবার এও সত্যি যে হরপ্পা পরবর্তী কালে গ্রীক প্রভাব ব্যতীত শিল্পচর্চা হয়নি এখানে এমনও না। ঋগ্‌ এবং অথর্বতে বেশী করেই আছে নানা শিল্প চর্চা। কালে কালে যা চৌষট্টি কলার রূপ নেবে। এবং এখানেই একটি মজার কথা জানিয়ে আপাতত শেষ করব। উৎসাহী পাঠক যদি ঋগ্‌বেদ পড়েন, সেখানে দেখবেন বরুণের যে চেহারার বর্ণনা আছে, সে চেহারা আদতে পরে বিষ্ণুর জুটেছে। হাতে অস্ত্র দিয়ে দিলেই একেবারে বিষ্ণু। আবার এই জন্যই বরুণের চেহারা কালে কালে বদলে তৈত্তিরীয় এবং শতপথ ব্রাহ্মণে বরুণের চেহারা হয়েছে ভয়ঙ্কর। যমের সঙ্গে অনেক বেশী নৈকট্য দাঁড়িয়েছে। এমন কেন হল সে আলোচনা দিয়ে শুরু করব পরের পর্ব। ৪। যে কোনো প্রাচীন গোষ্ঠীই তার তার দেবতা বা দেবী সৃজন করেছে। দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় খুব স্পষ্টভাবেই জর্জ থমসন বা রবার্ট ব্রিফল্টদের পথ অনুসরণ করে দেখিয়েছেন যে ইন্দো-ইউরোপিয়ান এবং ইন্দো-ইরানিয়ান স্পিকার গ্রুপ ছিলেন পশুপালক স্তরে, সমাজে পুরুষ প্রাধান্য, অতএব দেবতার সংখ্যাই বেশী। অন্যদিকে হরপ্পা কৃষিসভ্যতার দ্বিতীয় স্তরে ছিল। প্রথম স্তরে নারীরাই কৃষিকাজ করতেন। সেই স্তরে জাদুবিশ্বাস ইত্যাদি থাকলেও সংগঠিত ধর্ম ছিল না। দ্বিতীয় স্তরে, লাঙল ব্যবহৃত হওয়ার সময় থেকে নারীরা কৃষিক্ষেত্রে গৌণ হয়ে পরেন। সেখানে পুরুষ প্রাধান্য। এবং সেখানেই নারী দেবতা সৃষ্টি করে পুরুষরা, নারী কৃষকদের আদিগুণকে স্মরণে রেখে। সে আলোচনায় বিশদে না গিয়ে যে কথা বলার তা বলি। অঞ্চলের জমিদার বৈষ্ণব, তাই অঞ্চলে বৈষ্ণবদের চর্চা বেশী, অথবা শাক্ত হলে শাক্ত চর্চা, এমন বাংলার ইতিহাসে হাজারো বার দেখা গেছে। সামান্য এই কথাটিকে মনে রাখলেই বোঝা যায় যে নানা গোষ্ঠীর মধ্যে যার প্রাধান্য যখন, তার দেবতাই প্রধান হয়েছে। মিত্রবরুণাদি ক্রমে ক্রমে পিছনে চলে গিয়েছে, সামনে এসেছে ইন্দ্র, বিষ্ণু ইত্যাদি। জেন্দ আবেস্তায় এ সব দেবতারা অনেকেই অসুর ছিলেন, কিন্তু কালে কালে তাদের দেবত্ব লাভ হয়েছে। কেন ও কী ভাবে সে আলোচনাতে যাবার পরিসরও এখানে খুব নেই। কিন্তু বিচলন যে হয়েছে এবং হয় তা শুধু আমরা স্মরণে রাখলাম। এবারে চলে আসি ইতিহাস আলোচনার সমস্যায়। দীপঙ্করদা, পটচিত্রে দুর্গা নিয়ে বলতে এসেছিলেন। এসে একটি চমৎকার কথা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন। সেটি হল ঐতিহাসিকের কাজ হচ্ছে যা দেখা যাচ্ছে বা প্রমাণ আছে শুধু সে কথাটার কথাই বলা, নিজ মতামত দেওয়া না। কিন্তু এমন ভাবে ইতিহাস চর্চা আমরা খুব একটা করি না। ইতিহাস ইন্টারপ্রিটেটিভ বিষয়। একটা উদাহরণ দিই। যখন অসুর এবং দুর্গার সম্পর্ক নিয়ে খুব জোর হৈ হৈ চলছে, তখন মিউজিয়ামের প্রাক্তন অধিকর্তা শ্যামলবাবু, হরপ্পায় আবিষ্কৃত একটি সিল দেখালেন। সেখানে একদিকে একটি মানবিক অবয়ব মহিষকে লাথি মারছে এবং বল্লম জাতীয় অস্ত্রে বিদ্ধ করছে। অন্যদিকে আছে পশুপতি জাতীয় একটি চেহারার ছবি। ছবিটি দেখে আঘাতকারীকে কোনোভাবেই নারী মনে হচ্ছে না। কিন্তু তাঁর প্রশ্ন এসে গেল যে এই কী আদি মহিষাসুরমর্দন? সে আলোচনাতে খানিক ব্যাপ্ত হওয়াও শুরু হল। খানিক পর দীপঙ্করদার কথার সূত্র ধরেই সঞ্চালক হিসেবে আমি বলতে বাধ্য হলাম আমাদের ইতিহাস বিচার প্রেজুডিসে আক্রান্ত সত্যি। এই সিল, তর্কের মধ্যে এসে যাওয়াতে আমরা একে মহিষসাসুর-এ জুড়ে নিচ্ছি, কিন্তু এমন অজস্র দেওয়ালচিত্র/গুহাচিত্র পৃথিবী জুড়ে আছে, যেখানে শিকারীর শিকার আঁকা আছে। তাহলে কালে কালে একে কোনদিন আফ্রিকা বা ইউরোপ আগত ঘটনা বলে চিহ্নিত করারও ঢল আসবে। এ আদ্যন্ত অনৈতিহাসিক কাজকর্ম। কিন্তু ইতিহাসের শিকারও বলা চলে। নানা বঞ্চনা, সামাজিক শোষণ, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ণের ধারা আমাদের ইতিহাসবোধকে ভীষণভাবেই পার্টিজান করে রেখেছে। সাধারণ স্বাভাবিককেও আমরা জেনে-বুঝে বা স্রোতে ভেসে অস্বাভাবিক করে তুলি। দুটি উদাহরণ দিয়ে এ প্রসঙ্গ থেকে সরব। আলোচনার প্রথম স্তরে নবকুমারবাবু, যিনি প্রথম আমাদের জানিয়েছেন যে মহিষাসুর মর্দন না করা দেবীরূপও আছে (এমন কী নানুরের কাছে একটি গ্রামও আছে যেখানে দুর্গা নয় নবপত্রিকারই শুধু পূজা হয় এক পরিবারে - ব্যতিক্রমী দুর্গা আলোচক শিবশঙ্করবাবু প্রমাণ দিয়েছেন তার) এবং যিনি জানিয়েছিলেন যে দেবী না দেব না অন্য লিঙ্গ তা অস্পষ্ট আসলে, এমন মানুষ বলতে গেলেন 'আর্যত্ব'-র ভালোমি নিয়ে। বাঙালির ভাল নেওয়া স্বভাব, তাই আর্যামির কাছ থেকে মাতা-পিতাকে পূজা করা দেবতার আগে ইত্যাদি নিয়েছে বলে শঙ্করাচার্যের শ্লোক উল্লেখ করলেন। এ ভাবনা ভাল নিঃসন্দেহে। কিন্তু আমার একটি সহজ প্রশ্ন ছিল। কণৌজিয়া ব্রাহ্মণরা বা সেন বংশ এ বাংলায় আসার আগেও তো এখানে মানুষ ছিল। প্রাগ্‌-ইতিহাস যুগের বসতিরও প্রমাণ এখানে মেলে। তাহলে তারা কি এর আগে জানত না যে মা-বাবাকে ভালবাসতে হয়, শ্রদ্ধা করতে হয়? এও কী সম্ভব? বহু সময়েই এক পক্ষকে আলো দিতে অন্য পক্ষকে আমরা অন্ধকার দিয়ে ফেলি। সাধারণ জ্ঞানের বিষয়কেও জটিল করে ফেলি। তাই বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়। এমনই আরেকটি ক্ষেত্র এসেছিল 'এরিয়ান ইনভেশন' নিয়ে। আর্য একটি সম্বোধন বাচক শব্দ মাত্র। ইন্দো-ইরানিয়ান বা ইন্দো-ইউরোপিয়ান স্পিকার গ্রুপই বলা উচিত। সংস্কৃত কালে কালে সাদা, কালো নানা বর্ণের মানুষ আয়ত্ব করেছেন। এ সব বহু আগে ইতিহাসে চলে এসেছে। কিন্তু মজা হচ্ছে যা রাজনৈতিক হয়ে ওঠে সেখানে মুখ্যত অনৈতিহাসিকদের স্বরই প্রবল হয়। এখানেও তাই হল। এই তত্ত্বটা বাতিল এমন ঘোষণা শোনা গেল একাধিকের কাছ থেকে। তাঁরা ইতিহাস চর্চা যুক্তি-প্রমাণের নিরিখে করেন না, অন্য ব্যবহারজীবি। তখন আমার মনে পড়ছিল অজিত কুমার হেমব্রম, যিনি মহিষাসুর স্মৃতিরক্ষা কমিটির সম্পাদক, তিনি বলছিলেন যে এ দেশে হয়তো সবাই এসেছে বাইরে থেকেই, খেরোয়ালরা আগে এসেছে মাত্র। আমি বাতিল ঘোষণাকারীদের বললাম, যদি আমরা তীব্র ভাবে বিদ্বেষটাকে বাদ দিই, তাহলে তো নৃতত্ত্ব বলে একটা ব্যাপার আছে, তার কাছে যাওয়া চলে। ভারতীয় উপমহাদেশে মানুষের বিবর্তনের মাধ্যমে উদ্ভব এমন কোনো প্রমাণ কী আজ অবধি জুটেছে? যদি না জুটে থাকে তাহলে সকলেই কোনো না কোনো সময় বাইরে থেকেই এসেছে এখানে। এই সহজ কথা মানতে সমস্যা একমাত্র রাজনৈতিক পরিসরে হয়। ঐতিহাসিক পরিসরে প্রমাণ ব্যতিরেকে কথা বলা মানে নিজ মতামত জানান এবং তা একেবারেই কোনো ঐতিহাসিক কাজ নয়। সিরা'র আলোচনাচক্রে সিরা'র কোনো মতামত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল না। ছিল প্রশ্নের মাধ্যমে জ্ঞানচর্চার প্রক্রিয়াতে অংশগ্রহণের ইচ্ছে। তাই আরো কিছু প্রশ্ন আমরা আলোচনা করব পরবর্তী এবং সম্ভবত শেষ পর্বে। অবশ্যই দনুজদলনী রূপ তার একটি। ৫। এই আলোচনাচক্রের সামান্য সংক্ষেপ লেখার সময় এক বন্ধু দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন দেবী নানা-র দিকে। কুষাণ সাম্রাজ্যে এসেছেন ইনি, ব্যাকট্রিয়ান দেবী। মিশেছেন আবেস্তার অনাহিতার সঙ্গে, যিনি আবার আদি ইরানীয়ান দেবী আরেদ্বী সুরা অনাহিতা। নানা কুষাণ যুগেই সিংহবাহিনী। ইনিই প্রথম সিংহবাহিনী দেবী এমন না। ক্যানানাইটদেরও এমন দেবী ছিলেন অনেক আগে। নাম কোয়েদেশ বা কাদেশ। কিন্তু এঁরা কেউ মহিষ হন্তারক ছিলেন না। এবং এঁরা সকলেই প্রজনন, বুদ্ধি, যুদ্ধ ইত্যাদির সঙ্গে নানা সময় জড়িয়ে। আরো দেবীর তালিকা বানানো চলে, এখন তা করছি না। তাহলে এমন কিছু একটা ঘটল যাতে দুর্গাকে রামায়ণেরও পরের কালে এসে মহিষাসুর মর্দিনী হতে হল। সে ঘটনা কী তার অনুমান প্রমাণ ব্যতিরেকে বৃথা। কিন্তু আমাদের আলোচনা চক্রে যখন বারবার একটি কথা ঘুরে ঘুরে আসছিল, যে অশুভ নিধনের চিহ্ন হল অসুর বধ, তখন কিন্তু তা সরলীকরণও হচ্ছিল। দুর্গা অশুভ যখন নিধন করেন তখন তা সব অসুরই কেন? সে সব অসুররা নারী এবং সম্পদ লোভে মত্ত, স্বর্গ দখল করে নেয় তাই? ইন্দ্রও তো যথেষ্ট লাম্পট্যের পরিচিতি রেখেছেন, সম্পদ চুরি তাঁরও অভ্যাস, তাহলে ইন্দ্র বধ বা দেব বধ নয় কেন? ঠিক এখানেই সমস্যা এসে দাঁড়ায়। প্রাচীন যুগের ইতিহাস সর্বত্র আজকের মত তথ্যাদিকীর্ণ নয়। সেখানে লোককাহিনী, দেব-দেবী কাহিনীতে ডায়ানামিক ভাবে নানা সঙ্কেত লুকিয়ে থাকে। সে সব থেকে নানা ভাষ্য হতে পারে। যেমন একটি দুটি গল্প আমিও লেখার লোভ সামলাতে পারছি না। আসিরিয়ান সাম্রাজ্যের আসুর নগরী, উচ্চারণে যা দাঁড়ায় তা অনেকটাই অসুর, কালে কালে আসিরিয়ার প্রধান দেব হয়ে উঠেছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যাবিলনিয়ানরা আস্তে আস্তে শক্তি সঞ্চয় করে, বিশেষ করে হামুরাবির কালে আসিরিয়াও তাঁকে কর দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু গল্পটা এখানেই শেষ না। আসিরিয়ানরা আবার ক্ষমতা বিন্যাসে বদল ঘটায় এবং মেসোপটেমিয়া অঞ্চল পুনর্দখলে আনে। তারা এমন কী ব্যাবিলনিয়ান সৃষ্টিতত্ত্বের মূল দেবতা করে তোলে অসুরকেই। হামুরাবির আমলে দক্ষিণ মেসোপটেমিয়ার প্রাধান্যের জন্য মার্দুককে প্রধান দেব করা হয়েছিল। এনিল তার আগে অবধি ছিলেন প্রধান দেব। অন্য কথায় যাবার আগে বলে রাখি মার্দুককে মারুতক জাতীয় উচ্চারণও করা হয় (মারুত মনে পড়ছে?), আবার এনিল অনিল-এর কাছাকাছি শব্দ না? যাই হোক, উত্তর মেসোপটেমিয়ায় উল্টো হয়। এনিল-এর সঙ্গিনী দেবী নিনলিল-কে মুল্লিসু নামে অসুরের বউ করা হয়। এনিলের সন্তানদেরও অসুরের সন্তান করা হয়। পদ্ধতিটা ইতিহাসবিদদের মতে শুরু হয়েছিলে চোদ্দশো বিসি-তে, চলেছে সাত বিসি অবধি। ব্যাবিলনীয় এবং আসিরিয় দু'দলই তখন মুখ্যত প্রাচীন সুমেরীয় ভাষা প্রভাবিত আক্কাদিয়ান ভাষাতেই কথা বলছে। অথচ এই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এভাবেই দেব-দেবীর চরিত্র বদলে দিচ্ছে। ইতিহাসে ক্ষমতা এমনই বস্তু যে দেব-দেবীরও তোয়াক্কা করে না। এবং এখানেই এসে যাচ্ছে অসুরের মহিষাসুর রূপের কথা। লামাসসু বলে এক আসিরিয় বা অসুর দেব-এর কথা জানা দরকার। ইনি ডানাওলা ষাঁড় বা সিংহ, এবং মাথাটা পুরুষ মানুষের। আসিরিয়রা নগরে নগরে প্রধান প্রবেশ দ্বারে এঁর মূর্ত্তি রাখত। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ান প্যান্থিয়নের দেব, মানে ইনি কমন এরা বা সি.ই-এর চতুর্থ সহস্রাব্দ আগের। অর্থাৎ হঠাৎ করে মহিষাসুর এসে যায়নি। আমরা ইদানীং জানি যে আবেস্তা আর ঋগ্‌ বেদ-এ পূজ্য অসুর ক্রমে ক্রমে পরবর্তী বেদ এবং পুরাণ কাহিনীগুলোতে অশুভ হয়ে উঠেছে। আসিরিয়ান-ব্যাবিলিনিয়ান দ্বন্দ্ব থেকে অনুমান করা চলে যে এখানেও একদা একই ভাষাভাষীদের মধ্যে নানা কারণে বিবাদ ও বিরোধ হচ্ছিল। ধর্ম তার অন্যতম, কিন্তু আসল হল ক্ষমতা। আর সাম্প্রতিক ইতিহাসও আমাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে বিবাদ ও রক্ত ক্ষয় কোনো জনগোষ্ঠীই ভোলে না। ভোলে না বলেই আধুনিক সমস্যা সমাধানেও তারা অতীত খুঁড়ে আনে। তাই একদিকে যখন অজিত কুমার হেমব্রম বলছিলেন যে দুর্গা পূজো করতে গেলে অসুরকে কেন মারতেই হবে, কেন অসুর ছাড়া চলবে না, তখন একাংশ কিন্তু বিষয়টা শুভ-অশুভের প্রতীকের দিকে টেনে নিয়ে গিয়ে থামাতে চাইছিলেন। যখন স্পষ্ট করেই প্রসঙ্গটা তুললাম যে সত্যিই আমাদের সাহসের অভাব হচ্ছে, অন্তত তাত্ত্বিকভাবে এ কথা মানতে, যে শস্য দেবীর পূজোতে অসুর বধের দরকার নেই, তখন পুরোহিতদের শিক্ষক প্রতীম, শাস্ত্র ও আচারবিদ নবকুমারবাবু বললেন যে দুর্গা অসুর ছাড়াও পূজো করা চলে। তা শাস্ত্র অসম্মত একেবারেই না। আলোচনা চক্রে যে আলাপ সাবলীল, কাছাকাছি বসা এবং যোগাযোগে যে কথা সহজে উঠে আসে সে কথা জনসমাজে উঠে আসবে কবে এবং কী ভাবে তা বলা মুশকিল। এই আলোচনা চক্র লোকশ্রুতি, লোককথা, লোকাচার এবং ইতিহাস-পুরাণাদি নিয়ে নতুন করে আরো গবেষণা দাবী করছে। অতীতের কাছে এ আমাদের ঋণ এবং সমকালের কাছে দায়বদ্ধতা। ৬। যাস্কের নিরুক্তের নিঘন্টুতে দেখছিলাম বেশ্যা শব্দের অর্থ কী! সে কথা জানানোর আগে বলি নিরুত্তর তন্ত্র বলছে সাত রকমের বেশ্যা হয়। গুপ্ত বেশ্যা, মহাকুল বেশ্যা, কুল বেশ্যা, মহোদয়া কুল বেশ্যা, রাজ বেশ্যা, ব্রহ্ম বেশ্যা। যদিও পন্ডিত নবকুমার ভট্টাচার্য আলোচনাচক্রে জানিয়েছেন বত্রিশ রকমের বেশ্যাও হয়। সে তর্কে আমি যেতে চাইছি না। দুর্গার আট হাত, দশ হাত, বত্রিশ হাত, সহস্র হাত সবই তো হয়। কালে কালে বহু কিছুর বদল ঘটতে থাকে, কাজেই এও বদলাবে তাতে আশ্চর্য নেই। আশ্চর্য এখানে যে প্রতিটি বেশ্যা শব্দের সঙ্গে যা জুড়ে আছে তাতে পেশাজীবিতার কোনো জায়গা নেই। মুখ্যত চরিত্রলক্ষণ এবং সে সব লক্ষণ জড়িয়ে আছে স্বাধীন নারী সত্ত্বার ইচ্ছে ও পছন্দের সঙ্গে। নবকুমারবাবু এবং শ্যামলবাবু দুজনেই বলছিলেন যে স্বনামধন্য রমণীকে বেশ্যা বলা হয়েছে। এবং নবকুমারবাবু জানাচ্ছিলেন যে গৃহে অবস্থানকারী প্রতিটি নারীকেই বেশ্যা বলা চলে। কী বিচিত্র না? এর ব্যাখ্যা নিয়ে আমরা খুব বিশদে যেতে পারিনি সময়াভাবে। সিরা'র অন্যতম কাণ্ডারী অশেষ যদিও স্পষ্টই প্রশ্ন রেখেছিল যে স্বনামধন্যা নারী-কে বেশ্যা বলা হচ্ছে ঠিক কোন সময়, তার উত্তরও কিছু আসেনি। এবং কী করে ঘরের নারীও বেশ্যা হয় তাও জানা যায়নি। সে কথা এখানে ছেড়ে যা বলতে চলেছি তা দুর্গাপূজোয় বেশ্যাদ্বারের মাটি নিয়ে বহু আলোচনার পূর্বের কথা। নিরুক্তের কথা পেড়েছিলাম। সেখানে দেখছি বেশ্যা শব্দের অন্যার্থ হল 'অলভ্যাম' অর্থাৎ অলভ্য। আগের দিনই বলছিলাম যে ঠোস-সবুদ ব্যতিরেকে ইতিহাস আলোচনা শুধুমাত্র নানা ব্যাখ্যার উপর নির্ভর করে। এখানেও তাই। নবকুমারবাবুদের বক্তব্য অনুযায়ী সমাজে সকলের এ পূজোতে ঠাঁই আছে এ কথা বোঝানোর জন্য এই বেশ্যাদ্বারের মাটি নেওয়া। সিরা'র আরেক উদ্যোগী সদস্য অমিতাভ বললেন আরেকটি ব্যাখ্যার কথা। সেখানে বলা হয় বেশ্যাদ্বারেই যেহেতু সবচেয়ে বেশী নানাধাঁচের বীর্য মাটিতে মেশে তাই বেশ্যাদ্বারের মাটি চাই। পুরুষ দেবরা সৃষ্টি করেছে নারী দেবীকে। তাদের শক্তির মিশ্রণ মনে রাখলে এও সঙ্গত ব্যাখ্যা। এবং এভাবেও দেখা যায় যে দুর্গা এক স্বাধীন নারী। সে নারীর স্বাধীন চরিত্রের জন্যই সে বেশ্যা। এবং সে স্বাধীন বলে একদিকে পুরুষের সমস্যা। অলভ্যও বটে। অন্তত তার ইচ্ছে ব্যতিরেকে কেউ পাচ্ছে না তাকে। এবং পেলেও তাকে পোষা যায় না। গো-ধর্মের যুগ চলে গেছে। সংসারে নারীর স্থান নির্ধারণ করা হয়ে গেছে। এমন সময় এ নিতান্তই বেমানান। তাই যুদ্ধে পাঠাও। ছলে-বলে-কৌশলে তাকে জিততেই হবে। না জিতলে? সমস্যা নেই! মরে গেলে স্বাধীন নারীটিও দূর হল সমাজ থেকে। জিতে গেছে? দাও একটা পূজো। বাকীদের বুঝিয়ে দাও যে স্বাধীন হলেই পূজ্য না, কাজে এলে পূজ্য। এবং খেয়াল রাখবেন পাঠক যে ছান্দোগ্য উপনিষদে উদ্দালক আরুণি যে শ্বেতকেতুকে ব্রহ্মবিদ্যা জানাচ্ছেন, সেই ব্রহ্মবিদ শ্বেতকেতুই কিন্তু কাহিনী অনুসারে নারীর বহুগামীতা বন্ধ করে একগামীতার স্রষ্টা। পুরুষের বহুগমন বন্ধ করেছিলেন কি? না। ব্রহ্মবাদ যেমন একেশ্বরবাদ, তেমনই সংসারেও একেশ্বরবাদের এ এক বিচিত্র চেহারাও বটে। ঈশ্বরটি পুরুষ, তাই নিয়মাধীন না। আবার শ্বেতকেতুর এই বিধান যে সকলেই যথা আজ্ঞা বলে মেনে নেয়নি তার উদাহরণও আছে ইতিহাসে। আম্রপালী কিম্বা নাটকে/জাতকে বাসবদত্তার কাহিনী আছে। আছে নিরুত্তর তন্ত্রে স্বাধীন কালীর কথা। এবং বন্ধু অপর্ণা কালীর লিঙ্গ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন আলোচনা চক্রে। আছে তার সমর্থনের ইঙ্গিতও। কালী নারী-পুরুষ এ সব কোনটাই না, কালী এ সবেরও উর্দ্ধে। কাজেই প্রাচীন অনুশাসন পড়লেই সমাজ তেমনই ভাবার কারণ একদমই নেই। এ ভাবে দেখলে দুর্গার স্বাধীন চরিত্রর এই ব্যাখ্যা কি ইতিহাস? আজ্ঞে না পাঠক। এ নিতান্তই আরেকটি ব্যাখ্যা। বাকী সকল ব্যাখ্যাও ইতিহাস না। কাজেই দু'ভাবে এমন ক্ষেত্রে এগোনো চলে। এক, যার যার বিশ্বাস অনুযায়ী যা ইচ্ছে বিশ্বাস করা। অন্যদিকে, বারংবার কাহিনীকে প্রশ্ন করে করে একটি যৌক্তিক নির্মাণ তৈয়ার করা। এবং তারপরেও যে যার উদ্দেশ্য অনুযায়ীই সেই যুক্তিকে নেবে বা ফেলে দেবে। গৌতম বসু মল্লিক, প্রিয় গৌতমদা বলছিলেন আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চার একটা বড় সমস্যা হচ্ছে চর্চাকারীরা দীর্ঘদিন ফিল্ডে থাকলেও অঞ্চলের বাইরে, বিশ্বের ইতিহাসে তাঁদের আগ্রহ কম এবং সন্ধানও কম। তাই বহু কিছুই তাঁদের ব্যাতিক্রম মনে হয় আসলে যা বিরাট বিশ্বে ততটা ব্যাতিক্রম না। এখানেও একই কথা প্রযোজ্য। সারা বিশ্বে বারেবারেই দেখা গিয়েছে পুরুষতন্ত্র তথা ক্ষমতাতন্ত্রকে নারী এবং ক্ষমতাকেন্দ্রের থেকে দূরে থাকা সব অস্তিত্বকেই নিজের সুবিধা ও প্রয়োজন অনুযায়ী সাজিয়ে নিতে। কাজেই বেশ্যাদ্বারের মাটির কথাও এভাবেই সাজিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং হতেই থাকবে, যদি না কারো এই বোধের উদয় হয় যে এভাবে আদিখ্যেতা দেখানোর আরেক অর্থ বর্তমানকালে ওই পেশাজীবিদের অস্তিত্বকে সঠিক অধিকার এবং ক্ষমতা না দিয়ে পরোক্ষে তাকে আরেকবার জানিয়ে দেওয়া যে সে কত প্রান্তিক এবং ক্ষমতার করুণার উপর নির্ভরশীল।

এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত যে কোন লেখালেখি, সেটা কলকাতা কমন্স-এর বক্তব্য হোক বা কোন ব্যক্তি-র, সেটা, সেই বিষয়ে, একটা ধারণা তৈরি করার প্রক্রিয়ার অংশ।চূড়ান্ত কোন অবস্থান নয়, একটা অবস্থানে পৌঁছনোর চেষ্টা।

তাই, এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত 'কলকাতা কমন্স’-এর যে কোন লেখা যে কেউ, প্রয়োজন বুঝলে, অন্য যে কোন জায়গায় ব্যবহার করতে পারেন। আমরা সেই ব্যবহারটা জানতে আগ্রহী।তাহলে এই চর্চা তৈরির চেষ্টাটা আরও ফলপ্রসূ হয়।

যে লেখাগুলো কলকাতা কমন্স-এর নয়, কোন ব্যক্তির নামে প্রকাশিত, সেখানে, বক্তব্যটা একান্তই লেখকের নিজস্ব। আমরা সেই বক্তব্যটা চর্চার প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি। এই লেখাগুলো আমরা লেখকের অনুমতিক্রমে প্রকাশ করি। সেগুলো অন্য কোথাও ব্যবহারের দায়িত্ব আমাদের পক্ষে নেওয়া সমীচীন নয়।

আর এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত যে কোন লেখা সম্পর্কে যে কোন প্রতিক্রিয়া কে আমরা স্বাগত জানাই।

আমাদের ইমেল করতে পারেন, commons@kolkatacommons.org তে।